বৃদ্ধের মৃতদেহ পাহারায় কুকুর
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে বাবার মৃতদেহ ফেলে রাখে সন্তানরা। রাতভর মৃতদেহ পাহারা দেয় একটি কুকুর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাকেরগঞ্জের দাড়িয়াল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল হোসেন খানের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। তার ছোট ছেলে বাবার সম্মতি ছাড়া বিয়ে করেন। এ কারণে বাবার সঙ্গে ছোট ছেলের মনোমালিন্য চলছিল। একপর্যায়ে ছোট ছেলে তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। এরপর বড় দুই ভাই সব সম্পত্তি তাদের নামে লিখিয়ে নেয়। কয়েক মাস আগে ছোট ছেলে ফিরে আসলে বাবা আবুল হোসেন খান জমি সমান ভাগ করে দিবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সম্পত্তি আর ভাগ করে যেতে পারেননি তিনি। গত ৩০ ডিসেম্বর আবুল হোসেন খান (৮৫) মৃত্যুবরণ করেন। এরপর বাবার মৃত্যু শোক ভুলে সন্তানরা সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা জানান, জমি বণ্টনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মৃতদেহ দাফনে বাধা দেন তার ছোট ছেলে। বড় দুই ভাই সম্পত্তি ছাড়বেন না বলে অনড় থাকেন। অন্যরা মৃতদেহ জানাজা ও দাফন করতে গেলে বাধা দেন ছোট ছেলে। একপর্যায় স্থানীয় মসজিদের সামনে বাবার মৃতদেহ ফেলে রেখে যান ছেলেরা।
প্রতিবেশীরা বেশ কিছুক্ষণ মৃতদেহের পাশে অপেক্ষা করেন। কিন্ত আবুল হোসেন খানের ছেলেরা ফিরে না আসায় অপেক্ষার পর তারাও চলে যান নিজ নিজ বাড়িতে। এরপর সেখানে আসে একটি বেওয়ারিশ কুকুর। গভীর রাতে মৃতদেহের পাশে ওই কুকুর ছাড়া আর কেউ ছিল না। পাহারাদারের মতো কুকুরটি সারারাত মৃতদেহের পাশে ছিল।
মৃতদেহ কুকুর পাহারা দেওয়ার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন স্থানীয় একজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরের দিন এলাকার চেয়ারম্যান ও পুলিশের মধ্যস্থতায় আবুল হাসেম খানের দাফন সম্পন্ন করা হয় আবুল হোসেন খানের ।
এদিকে, কুকুরের ছবিসহ ওই পোস্টটি এখন ফেসবুকে ভাইরাল। শেয়ার ও নানা ধরনের মন্তব্যসহ ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা করে ঝড় তুলেছে পোস্টটি। অনেকেই এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। আবার কেউ কেউ ধিক্কার জানিয়ে সম্পত্তি লোভী সন্তানদের শাস্তি দাবি করেছেন।
দাড়িয়াল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জানান, ঘটনার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। কিন্তু মুঠোফোনে বিষয়টি জেনে ব্যাথিত হয়েছি। পরে থানা পুলিশের সহায়তায় এবং আমার লোকজন দিয়ে জানাজা ও মৃতদেহ দাফনের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি আবুল কালাম জানান, মৃতদেহের দাফন সম্পন্ন হলেও আবুল হোসেন খানের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ মেটেনি। রোববার তাদের নিয়ে সালিশ বৈঠক করা হয়েছে। তবে সমাধানে আসা যায়নি। সোমবার বিকেলে আবারও সালিশ বৈঠক বসবে।