ভ্যাকসিন পেতে ফ্রন্টলাইনার্সদের রেজিস্ট্রেশনে ধীরগতি
ভ্যাকসিন পেতে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা ফ্রন্টলাইনার্সদের রেজিস্ট্রেশনে অনাগ্রহের কারণে ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনে ধীরগতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেতে রেজিস্ট্রেশন চালু হওয়ার সপ্তম দিন মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত মাত্র ৪১ হাজার মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে দিনে গড়ে ৭ হাজার মানুষও রেজিস্ট্রেশন করছেনা।
দিনে দুই লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপ্রিলের মধ্যে প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া শেষ করতে হবে। না হলে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। তাই ভ্যাকসিন নিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপকহারে প্রচার চালাতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নিবন্ধন কম হচ্ছে কারণ আমাদের অফিসগুলো এখনো রেজিস্ট্রেশন করেনি। প্রথম ধাপে যাদের ভ্যাকসিন দেয়ার কথা যেমন পুলিশ, সেনাবাহিনী, ডাক্তার-নার্স, ব্যাংকার, সরকারি কর্মকর্তারা এখনো তেমন রেজিস্ট্রেশন করেনি। আমরা প্রত্যেকটা অফিসকে বলেছি আপনারা রেজিস্ট্রেশন করেন। আমরা প্রত্যেকটা জেলা থেকে যে পরিমান রেজিস্ট্রেশন করতে বলেছি তা এখনো করা হয়নি'।
অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, 'আমরা পড়শু মিটিং করে সব জেলার ডিসি, এসপিদের বলেছি রেজিস্ট্রেশন করতে। আমরা আশা করছি আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে তারা রেজিস্ট্রেশন করে ফেলবে। এ রেজিস্ট্রেশনগুলো অফিসভিত্তিক। সাধারণত অফিসগুলো দলবেঁধে রেজিস্ট্রেশন করছে। এসব রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে একটা বড় অংশের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে'।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে www.surokkha.gov.bd অ্যাপে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে। প্রথম মাসে ১৫টি পেশার প্রায় ২৭ লাখ ফ্রন্টলাইনার্স ও ৭৭ বছরের বেশি বয়সী মানুষসহ ৬০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, 'রেজিস্ট্রেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এরইমধ্যে সাত তারিখ ভ্যাকসিনেশন শুরু করার মত রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। এরপর থেকে রেজিস্ট্রেশন ও ভ্যাকসিনেশন চলতেই থাকবে'।
ভ্যাকসিন পেতে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন পুলিশের এআইজি সোহেল রানা। তিনি বলেন, 'রেজিস্ট্রেশনের জন্য যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা কাজ করছেন'।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ১০ থেকে ১১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী করতে যে পরিমান প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন তা হয়নি। ভ্যাকসিনের উপকারিতা সম্পর্কে না জানার কারণে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ফ্রন্টলাইনার্স কেউই আগ্রহী হচ্ছেনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ সায়েদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী করতে এখন পর্যন্ত কোন সুসংঠিত ক্যাম্পেইন হয়নি। সাড়া শহরে বিলবোর্ড নেই, বিজ্ঞাপন নেই। ভ্যাকসিনের সুবিধা বা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হলে সরকার কি কি করবে সে বিষয়ে কোন প্রচারণা নেই। ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছানোর পর দেশে একটা উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করে ভ্যাক্সিনের সুবিধা ও অসুবিধা কবে জানানো উচিত ছিল। এমনকি সুরক্ষা রেজিস্ট্রেশনটাও ঠিকমত বোঝানো হয়নি। এসব কারণে যাদের ভ্যাকসিন প্রয়োজন তারা ভ্যাকসিনেশনের বাইরে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে'।
তিনি বলেন, 'এখনো সময় আছে। কোন ধরণের বার্তা মানুষকে ভ্যাকসিন পেতে উদ্বুদ্ধ করতে তা যাচাই বাছাই করে মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় প্রচার চালাতে হবে। আমরা সেই অল্পকিছু ভাগ্যবানদের মধ্যে রয়েছি যারা ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেছে'।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান নিজে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'ভ্যাকসিনের কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হতেই পারে কিন্তু তাও ভ্যাকসিন নিতে হবে। কারণ ভ্যাকসিন অঙ্গহানি ও মৃত্যু ঠেকাবে'।
মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করতে টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
ভ্যাকসিন নিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে মন্ত্রী, এমপি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'ভ্যাকসিন ছাড়া করোনাভাইরাস দেশ থেকে একেবারে নির্মূল করা যাবেনা। ভ্যাকসিন নিলে সামান্য পাশ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এ ভ্যাকসিন নিরাপদ'।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সিনিয়র কলিগ যারা মন্ত্রী, এমপি রয়েছেন তাদের আহ্বান করবো ভ্যাকসিন নিবেন একযোগে। স্থানীয় প্রতিনিধিদের আহ্বান করবো ভ্যাকসিন নিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা আছে তাদের আহ্বান করবো জেলা উপজেলায় এসে ভ্যাকসিন নিতে। মানুষ কেন্দ্রে এসেও ভ্যাকসিন পেতে নিবন্ধন করতে পারবেন। সবাই ভ্যাকসিন নেন। দেশকে নিরাপদ রাখেন'।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনায় রয়েছে, একটি কেন্দ্রে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হবে। সারা দেশে মোট ৬ হাজার ৯৯৫টি কেন্দ্র থেকে টিকা দেওয়া হবে। ঢাকা শহরে ৩৫৪টি কেন্দ্রের তালিকা করা হয়েছে।