ভ্যানের উপর জন্ম নিয়েই তোলপাড় রুদ্রের, বাড়িতে গেলেন ডিসি
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল চত্বরের জন্ম নেয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছে রুদ্র দাস। হাসপাতাল চত্বরে ভ্যানের উপর রুদ্রের জন্ম নেওয়াকে কেন্দ্রকে তোলপাড় চলছে গোটা স্বাস্থ্য বিভাগে। সোমবার ঘটনাটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠণ করেন সিভিল সার্জন। পৃথক আরেকটি তদন্ত টিম গঠণ করেছেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে শহরের ঝুঁটিতলা এলাকায় ওই গৃহবধু ও তার নবাগত সন্তানকে দেখতে যান ও সার্বিক খোঁজ খবর নেন জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল।
জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল বলেন, নবজাতকের জন্য শিশুখাদ্য ও তার মায়ের জন্য পুষ্টি সহযোগী খাবার ক্রয় করার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া স্বাস্থ্য সেবার সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য জরুরী সভা আহবান করা হয়েছে।
এর আগে গত পহেলা মে সকাল ৭.২০ মিনিটে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল চত্বরে ভ্যানের উপর একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন গৃহবধু শিমুলী রানী দাস। তিনি ঘোনা ইউনিয়নের ছনকা গ্রামের বিধান দাসের স্ত্রী। বর্তমানে বাবার বাড়ি সদর উপজেলার মাছখোলা ঝুঁটিতলা এলাকায় অবস্থান করছেন। সোমবার (৪ মে) ঘটনাটির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
শিমুলী রানীর মা অষ্টুমী রানী দাস জানান, প্রসব বেদনায় মেয়েকে নিয়ে সদর হাসপাতালে গেলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসকরা কোন চিকিৎসা দেয়নি। কিছুক্ষণ পরই মেয়ের প্রসব বেদনা উঠে। সঙ্গে একজন ধাত্রী থাকায় হাসপাতাল চত্বরে ভ্যানের উপর ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় শিমুলী। পরে আমরা বাড়িতে ফিরে আসি। ছেলের নাম রাখা হয়েছে রুদ্র দাস। মা-সন্তান দু'জনই সুস্থ রয়েছে।
গৃহবধু শিমুলী দাসের বাবা পরেশ দাস জানান, প্রথমে ভোরবেলা শহরের সিবি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপরে উঠায় মেয়েকে। তারপর তারা বলে, ডাক্তার আসতে ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা বেজে যাবে। তখন ওখান থেকে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। এরপর এসপি বাংলোর পেছনের ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে তিনতলায় উঠানোর পর কাগজপত্র দেখে মেয়েকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেন।
তিনি আরও জানান, ভোরবেলা সদর হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখি, দুইজন ঘুমিয়ে আছেন। তাদের ডেকে তোলার পর মেয়েকে দেখার কথা বলি। তখন তারা বলে, ভিতরে নিয়ে আসেন। কিন্তু ভিতরে নিয়ে আসার মত অবস্থা তখন মেয়ের ছিল না। এর কিছুক্ষণ পরই সঙ্গে থাকা ধাত্রীদের মাধ্যমে ভ্যানের উপরে নরমল ডেলিভারীতে সন্তান প্রসব করে শিমুলী। তারপর রক্ত ধুয়ে মুছে দিয়ে বাড়িতে চলে আসি।
ঘটনার দিন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. অসীম সরকার বলেন, কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে নরমল ডেলিভারী হওয়ার পর তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মা ও শিশুর চিকিৎসার জন্য বলা হয়। তবে মা ও শিশু সুস্থ থাকায় তারা হাসপাতালে থাকতে রাজি না হয়ে বাড়িতে চলে যায়।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত জানান, ঘটনাটি জানার পর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠণ করা হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।