মওদুদের শোকসভা করতে না দেওয়া কী ধরনের রাজনীতি: কাদের মির্জা
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌর মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্মরণে নাগরিক শোকসভার আয়োজন প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আয়োজন আবদুল কাদের মির্জা।
ফেইসবুক লাইভে এসে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র বলেন, যে দেশ তার গুণীব্যাক্তিকে সম্মান করে না, সে দেশে গুণী মানুষ সৃষ্টি হয় না।
তিনি বলেন, "আমাদের এক নেতা বলেছেন, 'কেউ যদি অধম হয়, আমরা কেন উত্তম হবো না' তার এ বক্তব্য কি মানুষের জন্য, নিজের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। নেতাজি স্মরণ রাখবেন অপমান ফেরত যায়।"
কাদের মির্জা বলেন, "ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নিঃসন্দেহে একজন গুণী-জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনিই এ এলাকায় উন্নয়নের পথ রচনা করেছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আইনজীবি ছিলেন। ৭২-এ সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের সহযোগী ছিলেন তিনি (মওদুদ)। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এ নাগরিক শোকসভা ও দোয়ার মাহফিল আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু দুপুরে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন এ শোক সভা করা যাবে না।"
"একই স্থানে গতকাল প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্মরণে শোকসভা ও মিলাদ মাহফিল করেছিলাম, কই তখন তো কেউ আমাকে বাধা দেয়নি। আসলে আমরা পরমত সহিষ্ণু রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছি। এটা করে প্রশাসন অপরাজনীতির হোতাদের কাছে প্রমাণ করলো মেয়র কাদের মির্জার কথা তারা শোনে না। প্রশাসন এখন অস্ত্রধারী অপরাজনীতির হোতা একরাম-নিজাম (একরামুল করিম চৌধুরী এমপি-নিজাম হাজারী এমপি), জাসদের সভাপতি-সম্পাদক খিজির হায়াত ও নুর নবীকে (বর্তমানে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান ও সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী) প্রাধান্য দিয়ে তাদের কথা মত চলছে।"
কাদের মির্জা আরও বলেন, "ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেবের জানাজায় যে কাণ্ডটি ঘটেছিল তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনের বক্তব্যের সময় বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি তার মুখ থেকে মাইক কেড়ে নিয়েছিলেন। আর দুর্নাম রটলো আমার (মির্জা) নামে। সেদিন শতাধিক নেতা স্টেজে ছিলেন, কেউ যদি বলতে পারেন আমি উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন সাহেবের মাইক কেড়ে নিয়েছি, তাহলে কোম্পানীগঞ্জ থেকে হিজরত করে চলে যাব।"
তিনি বলেন, "আসল কথা হচ্ছে, যারা যখন ক্ষমতায় আসে, কিছু কিছু লোক মনে করে এটা তাদের পারিবারিক সম্পত্তি। যা ইচ্ছা তা বলে ও করে। আমার ভাবমুর্তি নষ্ট, আমাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া ও আমার মুখ বন্ধ করার জন্য কেউ না কারও নির্দেশে আজকের এ শোকসভা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর পরিণতি মোটেই ভালো হবে না। যিনি বা যার নির্দেশে এ শোক সভা বন্ধ হয়েছে, আপনিও একদিন এধরনের নির্দেশে লাঞ্ছিত-অপমানিত হবেন। সে সময়ের অপেক্ষ করুন।"
কাদের মির্জা বলেন, "জীবিত মওদুদের চেয়ে মৃত মওদুদ অনেক বেশি জনপ্রিয়, এখানকার মানুষ তা প্রমাণ করায় রাজনৈতিক সংকীর্ণতার কারনেই বসুরহাট পৌরসভায় আয়োজিত কর্মসূচী বন্ধ করা হয়েছে। মৃত মানুষের সাথেও রাজনীতি, এটা কি ধরনের রাজনীতি, এ সংস্কৃতি থেকে আমাদের সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের অভিভাবক যারা দাবী করেন, শোক সভা বন্ধ করে দেয়া কি অভিভাবকের কাজ।"
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল ইসলাম রনি বলেন, "উধ্বর্তন কতৃপক্ষের নির্দেশে ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বসুরহাট পৌর এলাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্মরণে সভা করার জন্য প্রশাসন থেকে কোন অনুমতি নেননি মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তাই তাকে সভা করতে দেওয়া হয়নি।"