মধ্যপাড়া পাথরখনি থেকে পূর্ণদ্যমে গ্রানাইট উত্তোলন শুরু
দিনাজপুরের পাবর্তীপুরের মধ্যপাড়া পাথরখনিতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পুরোদমে তিন শিফটে গ্রানাইট উত্তোলন শুরু হয়েছে।
আজ বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে খনিতে ৩ শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু করে খনিটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানীয়া- ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন শিফটে এই খনি থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হবে।
জানা গেছে, মধ্যপাড়া পাথর খনির রক্ষণাবেক্ষন, ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদন- এর দায়িত্বে নিয়োজিত বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি'র সাথে চুক্তির পর পাথর উত্তোলনের রেকর্ড হয়। ফলে গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো লাভের মুখ দেখে মধ্যপাড়া পাথরখনি। তবে করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে এ খনিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়।
খনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ে প্রায় ৮শ' শ্রমিক। তারা বিভিন্ন সময়ে খনিতে উত্তোলন শুরু ও বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদানের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন। এসময় তারা মূল বেতনের ৫ শতাংশ বৃদ্ধি, ছুটিকালীন বেতন-ভাতা, অনতিবিলম্বে খনি থেকে পাথর উত্তোলন শুরু, ঝুঁকি ভাতা, ৪ শিফটে পাথর উত্তোলন এবং শ্রমিকদের জীবন বিমা সুবিধার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলেন।
এরপর দীর্ঘ ৪ মাস পর আগষ্ট মাসের ১৩ তারিখ থেকে এক শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। দেশের উন্নয়নে মধ্যপাড়া খনির পাথর ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে এখান থেকে উত্তোলনকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে চলতি সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে আরেক শিফট বাড়িয়ে- দুই শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এ দুই শিফটে পাথর উত্তোলন হচ্ছিল গড়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মে.টন।
জিটিসি মাসিক এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অতিদ্রুত পুরোদমে তিন শিফটে পাথর উত্তোলন ও উন্নয়ন কাজ শুরু করে। বুধবার থেকে খনিতে ৩ শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। জিটিসি'র বেলারুশীয় খনি বিশেষজ্ঞ, দেশীয় প্রকৌশলী এবং প্রায় সাড়ে ৭ শত খনি শ্রমিক নিরলসভাবে কাজ করে খনির তিন শিফটের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন গ্রানাইট পাথর উত্তোলন করবে।
মধ্যপাড়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম কামরুজ্জামান ৩ শিফটে উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আগষ্ট মাসের ১৩ তারিখ থেকে খনিতে এক শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু করা হয়। পরে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে দুই শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু করা হয়েছিল। দুই শিফটে দৈনিক পাথর উত্তোলন হচ্ছিল সাড়ে ৩ হাজার মে.টন। এখন তিন শিফটে পাথর উত্তোলন শুরু হলো। এতে করে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মে.টন পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হবে। যাতে করে পাথরখনির লাভবান প্রতিষ্ঠানের ধারা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র পাথর খনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (এমজিএমসিএল) বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে ২০০৭ সালের ২৫ মে।
প্রাথমিক অবস্থায় খনি থেকে দৈনিক ১ হাজার ৫'শ থেকে ১ হাজার ৮'শ টন উত্তোলন হলেও, পরে তা নেমে আসে মাত্র ৫'শ টনে। এমন অবস্থায় উৎপাদন বাড়াতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের বিপরীতে ১৭১.৮৬ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে- বেলারুশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসি'কে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব দেয়া হয়।