মহা বিপন্ন বনরুই উদ্ধার
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে একটি বনরুই উদ্ধ্বার করেছে বনবিভাগ। বিশ্বব্যাপী বিপন্ন এবং বাংলাদেশে মহা বিপন্ন অবস্থায় থাকা বনরুইটি বর্তমানে লাউয়াছড়ার জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে পর্যবেক্ষণে আছে। তবে এই বনরুইটি উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জারড ওয়াইল্ড লাইফ' (এসইডব্লিউ)।
বনবিভাগ ও এসইডব্লিউ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা খাসিয়া পুঞ্জি এলাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রানী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেবের সাথে মেঘা নামের জনৈক ব্যক্তি মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানায় তার কাছে একটি বনরুই রয়েছে এবং তিনি এটি তাদের চিড়িয়াখানায় বিক্রি করতে চান।
কিছুক্ষণ পরেই সেই মুঠোফোন নম্বর বন্ধ হয়ে যায়৷ কোনভাবেই আর তার সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না৷ ইতিমধ্যেই সজল দেব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বন বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেন৷
টিম এসইডব্লিউ-এর সোহেল শ্যাম পাপ্পুর সাথে সজল দেব যোগাযোগ করলে সাথে টিম এসইডব্লিউ জেলার প্রতিটি খাসিয়া ও গারো পল্লিতে মেঘা নামের ব্যক্তিটিকে খুঁজতে থাকে।
এসইডব্লিউ এর সদস্য সোহেল শ্যাম পাপ্পু জানান, 'এক সময় নিশ্চিত হই মেঘা নামের কেউ আসলে নেই। দ্বিতীয় ধাপে আমরা সেই মুঠোফোনের নাম্বার ছড়িয়ে দেই দুই এলাকায় আমাদের সহকর্মী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে৷ নাম্বারটি ব্যবহাকারীর পরিচয় ও অবস্থান খোঁজার চেষ্টা করতে থাকি৷ এই চেষ্টায় জানতে পারি জনৈক ব্যাক্তিটির নাম মেঘা নয় জুয়েল৷ সে কুলাউড়া উপজেলার জাপান পান পুঞ্জির বাসিন্দা'৷
সাথে সাথে টিম এসইডব্লিউ যোগাযোগ করে ৷ ঐ প্রান্ত থেকে তখন জানানো হয় বনরুইটি গত রাতেই খাঁচা থেকে পালিয়ে যায়৷ তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় টিম এসইডব্লিউ তাকে চাপ প্রয়োগ করে।
ততক্ষণে টিম এসইডব্লিউ এর সদস্য খোকন থউনাউজাম (ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার), সোহেল শ্যাম পাপ্পু (ওয়াইল্ড লাইফ রেস্কিউয়ার), কাজল হাজরা (ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার), নির্ঝর নিলয় (ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার) কুলাউড়ায় রওনা দেয়।
এর মধ্যেই বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিমের নির্দেশনায় জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার এবং মৌলভীবাজার সদর রেঞ্জ অফিসার গোলাম সরোয়ারের নেতৃত্বে বনবিভাগের ৬ জনের একটি দল সাথে সাথে রওনা দিয়ে দেয় লোকেশনের উদ্দেশ্যে ৷ সাথে যোগ দেন বন্যপ্রানী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব৷
পরবর্তীতে সেখান থেকে বনরুইটি উদ্ধার শেষে বনবিভাগের উপস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখার এবং যেকোন বন্য প্রানী শিকার করা বা ধরা থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করেন৷ হেড ম্যান শেখর চিরান এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
উদ্ধার হওয়া বনরুইটি বর্তমানে জানকিছড়াস্থ বনবিভাগের রেসকিউ সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে৷
জুয়েল জানান, তাদের পুঞ্জির একজন এটি ধরে তার কাছে দিয়েছিল এবং তাকে জানায় যে, এটি বিক্রি করলে প্রচুর টাকা পাবেন তাই তিনি টাকার লোভে বিক্রি করার জন্য সজল দেবকে কল দেন।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, 'বনরুইটি আমরা উদ্ধার করে লাউয়াছড়ার রেসকিউ সেন্টারে রেখেছি। ২-৩ দিন সেবা করে একটু সুস্থ করে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করব'। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসইডব্লিউ এই বনরুইটি উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।