মহেশখালীর সাত্তার হত্যা: ওসি প্রদীপসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ খারিজ
কক্সবাজারের মহেশখালীতে 'বন্দুকযুদ্ধে' আবদুস সাত্তার নিহতের ঘটনায় মহেশখালী থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে বুধবার দায়েরকৃত অভিযোগটি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
অভিযোগ শুনানীর পর দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহেশখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আব্বাস উদ্দীন অভিযোগটি খারিজ করেন।
তবে সাত্তার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে চার বছর আগে পুলিশের পক্ষে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে দায়েরকৃত মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে। চাঞ্চল্যকর মামলাটি এএসপি মর্যাদার একজন সিআইডি কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। এমনটি জানিয়েছেন বাদির আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম।
এর আগে বুধবার ওসি প্রদীপ ও পুলিশের পাঁচ সদস্যসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন নিহত আবদুল সাত্তারের স্ত্রী হামিদা আক্তার (৪০)।
অ্যাডভোকেট মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, 'আবদুস সাত্তার হত্যায় দায়ের করা ফৌজদারি দরখাস্তটি আমলে নিতে অপারগতা জানিয়েছেন বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আব্বাস উদ্দিন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে দায়েরকৃত রিট অনিস্পত্তি অবস্থায় রয়েছে।'
বুধবার হামিদা আক্তারের দায়েরকৃত ফৌজদারি দরখাস্তে মহেশখালীর ফেরদৌস বাহিনীর প্রধান ফেরদৌস, থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই হারুনুর রশীদ, এসআই ইমাম হোসেন, এএসআই মনিরুল ইসলাম, এএসআই শাহেদুল ইসলাম ও এএসআই আজিম উদ্দিনসহ ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
হামিদা আক্তার জানান, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে ফেরদৌস বাহিনীর সহায়তায় হোয়ানকের লম্বাশিয়া এলাকায় তার স্বামী হোয়ানক পূর্ব মাঝেরপাড়ার মৃত নুরুচ্ছফার ছেলে আবদুস সাত্তারকে হত্যা করা হয়।
তিনি আরও জানান, ওই সময় এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেওয়ায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। রিট পিটিশন নং-৭৭৯৩/১৭ মূলে 'ট্রিট ফর এফআইআর' হিসেবে গণ্য করতে আদেশ দেন বিচারক। সেই আদেশের আলোকে তিনি একই বছরের ১৭ জুলাই কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে লিখিত দরখাস্ত দেন। কিন্তু পুলিশ আবেদন আমলে না নিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন।
আদালত আগের আদেশ বাতিল করে পুনরায় শুনানীর কথা বলেন। কিন্তু আর এগুনো হয়নি। প্রতিপক্ষ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তার স্বামীকে উঠিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ওসি প্রদীপ সিন্ডিকেট হত্যা করে বলে দাবি তার।
হামিদা আক্তার বলেন, 'আমি চরমভাবে হতাশ হয়েছি। স্বামীর মৃত্যুর পর অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটছে। উচ্চ আদালতে যাওয়া অনেক টাকার বিষয়, তাই যেতে পারছি না। সিনহা হত্যায় ওসি প্রদীপ কারাগারে থাকায় আশা করছিলাম নিম্ন আদালতে আমার স্বামী হত্যার অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে বিচারের পথে হাটতে পারব। কিন্তু আমার আশায় গুড়েবালি হলো। যদি সুযোগ হয়, উচ্চ আদালতে যাব। না পারলে আল্লাহর ওপর ভরসা করে স্বামী হত্যার বিচারের অপেক্ষা করতে হবে।'
অপর দিকে পুলিশের দাবি, নিহত আব্দুস সাত্তার অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন। তাই বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যুর পর পরিবারের দায়ের করা এজাহারটি থানায় মামলা হিসেবে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল থানা পুলিশ।