মারা গেলেন গায়ে আগুন দেওয়া সেই মেয়েটি
‘স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার’ পর অভিযোগ করতে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানায় যান কলেজছাত্রী লিজা রহমান। থানায় নাম অন্তর্ভুক্তির পর বেরিয়ে নিজের গায়েই কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। টানা পাঁচ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে বুধবার সকালে না ফেরার দেশে চলে যান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মেয়ে লিজা।
লিজার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিলো এই কলেজছাত্রীর।
লিজা রহমান (১৮) রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার স্বামীর নাম সাখাওয়াত হোসেন। সাখাওয়াতের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোলে। সাখাওয়াত হোসেন রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তারা রাজশাহীর পবা উপজেলার নতুনপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, “শনিবার সকালে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর ছেলের বাবা মা এসে তার স্বামীকে বাড়ি নিয়ে যায়। এসময় ছেলের বাবা-মা তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেয়। এতে লিজা উত্তেজিত হয়ে প্রথমে থানায় যায়। পরে ওসি তাকে ভিকটিম সার্পোট সেন্টারে অভিযোগ করতে বলেন এবং দুইজন নারী কনস্টেবলসহ তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠান। সেখানে গিয়ে সে তার নাম ঠিকানা বলার পর মামলা করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বেরিয়ে যান। পরে থানা থেকে বের হয়ে থানার কিছুদূর গিয়ে কেরোসিন কিনে গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ধারণা করছি পারিবারিক কলহের জের ধরেই মেয়েটি গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেছে। এছাড়া পরিবারের অমতে বিয়ে হওয়ায় তারা এমনিতেই একটা চাপে ছিলো। তাছাড়া মেয়েটির বাবা মাদক মামলায় কারাগারে ও সৎ মা থাকায় মনে হয় ডিপ্রেসডও ছিলো।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর আড়াইটার দিকে লিজা তার গায়ে আগুন দেয়। সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা তখন জানান, তার শরীরের সামনে কোমরের ওপর থেকে মুখমন্ডল শ্বাসনালীসহ প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় লিজাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো করা হয়।
এদিকে রাজশাহীতে কলেজছাত্রী নিজের গায়ে প্রকাশ্যে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, “তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সালমা বেগম। এছাড়া রয়েছেন, ডিবির ডিসি আবু আহম্মেদ আল মামুন রয়েছে এই কমিটিতে। তাদেরকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”