সাইবারট্রাক হামলাকারী ছিলেন মার্কিন এলিট ফোর্সের সৈনিক, বিস্ফোরণের আগে নিজের মাথায় গুলি করেন
যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে ট্রাম্প হোটেলের সামনে বিস্ফোরিত টেসলা সাইবারট্রাকের চালক ছিলেন মার্কিন বিশেষ বাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্য। বিস্ফোরণের আগে তিনি গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।
লাস ভেগাস পুলিশ চালককে শনাক্ত করেছে। তার নাম ম্যাথিউ অ্যালান লাইভেলসবার্গার। তিনি কলোরাডো স্প্রিংস-এর বাসিন্দা ছিলেন। বিস্ফোরণের দিন সকালে তিনি গাড়িটি ৮০০ মাইল দূর থেকে ভাড়া নিয়ে নেভাডার হোটেলে আসেন।
ক্লার্ক কাউন্টি কোরোনার অফিস [ময়নাতদন্ত কার্যালয়] জানিয়েছে, লাইভেলসবার্গারের মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা। তিনি নিজেকে মাথায় গুলি করেছেন।
নতুন বছরের প্রথম দিনে গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়। গাড়ির ভেতর জ্বালানি ক্যানিস্টার এবং আতশবাজি ছিল। বিস্ফোরণে সাতজন আহত হয়েছেন। তবে তাদের আঘাত গুরুতর নয়।
পুলিশ জানায়, লাইভেলসবার্গার বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে লাস ভেগাসে গাড়িটি নিয়ে আসেন। দুই ঘণ্টার মধ্যেই এটি বিস্ফোরিত হয়। হোটেলের কাচের দরজার সামনে গাড়িটি পার্ক করে রাখা হয়েছিল। প্রথমে ধোঁয়া ওঠে, এরপরই বিস্ফোরণ ঘটে।
লাস ভেগাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাইবারট্রাক বিস্ফোরণের শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছে। বিস্ফোরণের ধাক্কা বাইরে ছড়িয়ে পড়ার বদলে ওপরের দিকে উঠেছিল। ফলে হোটেলের কাছাকাছি থাকা কাচের দরজা ও জানালা ভাঙেনি। তবে, কর্তৃপক্ষ এখনো ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে পারেনি।
লাস ভেগাসের শেরিফ কেভিন ম্যাকমাহিল বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "এটি আত্মহত্যা, যার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ হয়েছে।"
তিনি জানান, তদন্তকারীরা পুড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে একটি সামরিক পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, দুটি পিস্তল, আতশবাজি, আইফোন, স্মার্টওয়াচ এবং কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করেছে। এগুলো লাইভেলসবার্গারের নামে ছিল।
ম্যাকমাহিল বলেন, গাড়িতে পাওয়া মৃতদেহটি এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে শনাক্ত করা যায়নি। তবে শরীরে থাকা দুটি উলকি তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
লাইভেলসবার্গার ২৮ ডিসেম্বর ডেনভার থেকে সাইবারট্রাকটি ভাড়া করেন। পুলিশ টেসলার চার্জিং প্রযুক্তি ও রাস্তার ছবির মাধ্যমে তার গতিপথ অনুসরণ করেছে। গাড়ি চালানোর সময় তাকে একাই দেখা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, লাস ভেগাস ও নিউ অরলিন্সের দুই ঘটনায় কিছু মিল রয়েছে, তবে কোনো নিশ্চিত সম্পর্ক নেই। দুই ঘটনায় গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। দুই সন্দেহভাজনই নর্থ ক্যারোলাইনার ফোর্ট ব্র্যাগ-এ কর্মরত ছিলেন এবং ২০০৯ সালে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছেন। তবে তাদের মধ্যে কোনো সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
উভয়েই ঘটনার জন্য গাড়ি ভাড়া নিতে টুরো নামের কোম্পানি ব্যবহার করা হয়েছে বলে শেরিফ ম্যাকমাহিল জানান।
তিনি বলেন, "আমরা মনে করি, এই ব্যক্তি বা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ লাস ভেগাসে আর কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।"
লাইভেলসবার্গার মার্কিন সেনাবাহিনী ও ন্যাশনাল গার্ডে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন স্পেশাল ফোর্স-এর ইন্টেলিজেন্স সার্জেন্ট ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি জার্মানিতে কর্মরত ছিলেন। তবে অনুমোদিত ছুটিতে ছিলেন।
লাইভেলসবার্গারের বাবা সিবিএসকে জানিয়েছেন, তার ছেলে স্ত্রী ও আট মাসের মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে কলোরাডো এসেছিলেন। বড়দিনে তার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। তখন সবকিছু স্বাভাবিক মনে হয়েছিল।