মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন রায়হান কবির
মহামারীর মধ্যে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় সেখানে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি শ্রমিক রায়হান কবির দেশে ফিরে এসেছেন।
শুক্রবার রাত ১টার দিকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর পরিবারের সদস্যরা রায়হানকে অভ্যর্থনা জানান।
রায়হানকে সেখানে অভ্যর্থনা জানাতে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "বাবা-মায়ের কাছে নিজ দেশে রায়হান ফিরে আসার পর বিমানবন্দরে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।"
রায়হান কবিরের বাবা শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, "সে এখন আমার কাছে আছে এবং সুস্থ আছে। আমার ছেলেকে ফিরে পেতে আপনারা সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছেন। তাই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তাকে ফিরে পেয়েছি এতেই খুশি, তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।"
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরণের সমালোচনা করে কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা টেলিভিশনের একটি ডকুমেন্টরিতে দেওয়া সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর গত ২৪ জুলাই রায়হানকে গ্রেপ্তার করে মালয়েশিয়ার পুলিশ।
আল জাজিরার ওই ডকুমেন্টরিতে তিনি বলেন, মহামারীর মধ্যে অবৈধ শ্রমিকদের আটক ও জেলে পাঠানোর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। এটা কোনো মানবিক আচরণ হতে পারে না।
তবে দেশটির সরকারের কর্মকর্তারা আল জাজিরার ওই খবর 'ভুল, বিভ্রান্তিকর এবং অন্যায্য' বলে দাবি করেন। ওই প্রতিবেদন সম্প্রচারের পর দেশটিতে ক্ষোভের সঞ্চার হলে রায়হানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ তাকে ধরিয়ে দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানায়। প্রকাশ করে তার ছবি সহ বিস্তারিত তথ্য। তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়। ঘোষণা দেয়া হয় তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তিনি মালয়েশিয়ায় চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হবেন।
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে রায়হান কবির বলেন, "এই আনন্দ প্রকাশ করার মতো নয়। গত ৬ বছরে আমি অনেকবার দেশে এসেছি। আবার গিয়েছি। কিন্তু এবারকার অনুভূতি ভিন্ন। আমার বাংলাদেশ, আমার মার্তৃভূমি, আমার মা, আমার পিতামাতা...এই অনুভূতি আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না। আপনাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কৃতজ্ঞতা দেশে ও বিদেশে যারা আমার পাশে ছিলেন সবার প্রতি।"
মালয়েশিয়ায় রায়হান কবিরের পক্ষে আইনি লড়াই করেন সুমিতা সান্তিনি কৃষ্ণা এবং সেলভারাজা চিন্নিয়া। গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে সুমিতা বলেছেন, শুক্রবার বিকালে পুত্রজয়া ইমিগ্রেশন অফিস থেকে সরাসরি বিমাবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় রায়হানকে। সব প্রক্রিয়া শেখ করার পর তাকে স্থানীয় সময় রাত ১১টায় একটি বিমানে তুলে দেয়া হয়। এ সময় তার করোনা ভাইরাস টেস্ট নেগেটিভ ছিল। যেহেতু তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি মালয়েশিয়া পুলিশ, তাই তাকে কোনো আইনগত জটিলতায় পড়তে হয় নি।