মৃত্যুর পর স্বীকৃতি পেল রানি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল গিনেসকে
মৃত্যুর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু হিসাবে মরণোত্তর স্বীকৃতি পেয়েছে সাভারের বামন গরু রানি।
এই স্বীকৃতির জন্য রানি বেঁচে থাকতেই গিনেস বুক অব রেকর্ডসে আবেদন করেছিল খামার কর্তৃপক্ষ; কিন্তু সে আবেদনে সাড়া পাবার আগেই গত ১৯ আগস্ট মারা যায় রানি। সে সময় বলা হয়, পেটে অত্যধিক গ্যাস জমে মারা গেছে রানি।
অসুস্থ অবস্থায় রানিকে সাভারের ভেটেরিনারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন গরুটি মারা যায়।
গত জুলাইয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এই বামন গরু; সে সময় রানিকে একনজর দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় করতো সাভারের চারিগ্রামের শিকড় এগ্রো ফার্মটিতে।
দুই বছর বয়সী গরুটির মালিক কাজী মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, তিনি গত সোমবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে একটি ইমেইল পেয়েছেন যেখানে তাকে জানানো হয়, রানির আবেদন গৃহীত হয়েছে।
এর আগে গিনেস রেকর্ডসে সবচেয়ে ছোট গরুর শিরোপা ছিল ভারতের কেরালা রাজ্যের মানিক্যম নামের একটি বামন গরুর, এর উচ্চতা ২৪ ইঞ্চি ও ওজন ৪০ কেজি।
অন্যদিকে রানির উচ্চতা ছিল ২০ ইঞ্চি (৫০ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার), দৈর্ঘ্য ২৭ ইঞ্চি (৬০ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটা) এবং ওজন ২৬ কেজি।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে সুফিয়ান বলেন, "আমরা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে রানির বেশ কয়েকটি ভিডিও পাঠাই। তাদের কাছে রানির ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও পাঠিয়েছি যা থেকে জানা যায়, তার মৃত্যুতে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না"।
রানিকে হরমোনের ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল কিনা তা জানতে চাইলে সুফিয়ান রানির মেডিকেল রেকর্ডসও গিনেস কর্তৃপক্ষকে পাঠান বলে জানিয়েছেন।
"রানি স্বীকৃতি পাওয়ার পর আমাদের মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। আমরা খুশি যে সে তার যথাযথ সম্মান পেয়েছে। কিন্তু আমরা একই সাথে ভীষণ দুঃখবোধ করছি কারণ সে আর আমাদের মাঝে নেই"।
"রানির যিনি দেখভাল করতেন, তাকে ওর মৃত্যুর সংবাদ দেয়ার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি", যোগ করেন সুফিয়ান।
দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করলেও সে সময় ঢাকা থেকে ১৯ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রামে রানিকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষেরা।
রানি বেঁচে থাকতে পার্শ্ববর্তী শহর থেকে তাকে দেখতে আসা রিনা বেগম (৩০) বলেন, "আমি আমার জীবনে এমন কিছু দেখিনি"।
শিকড় এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক এম এ হাসান হাওলাদার সে সময় একটি দৈর্ঘ্য পরিমাপক দিয়ে মেপে দর্শনার্থীদের দেখান যে, রানি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় কতটা ছোট!
জন্মের পরপরই নওগাঁর কোন এক খামার থেকে রানিকে কিনে আনে শিকড় এগ্রো ফার্ম।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে হাসান হাওলাদার বলেছিলেন, "করোনাভাইরাস লকডাউনের মধ্যেও রানিকে দেখতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। বেশিরভাগ মানুষই রানির সাথে সেলফি তুলতে চান।"
"শুধুমাত্র গত তিন দিনে কমপক্ষে ১৫,০০০ মানুষ রানিকে দেখতে এসেছে। সত্যি বলতে মানুষের ভিড় সামলাতে সামলাতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।"
"লোকজনের এত আগ্রহ হবে-তা আমরা আশা করিনি। দেশে চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে কারোরই এভাবে স্রেফ কৌতুহল মেটাতে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়," যোগ করেন তিনি।
রানি ছিল ভুট্টি প্রজাতির গরু; এই জাতের গরু তাদের মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ। খামারের অন্যান্য ভুট্টি গরুগুলো রানির দ্বিগুণের চেয়েও বড় আকারের।
রানির জন্মের বিষয়ে আঞ্চলিক প্রধান পশু চিকিৎসক সাজেদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, জেনেটিক ইনব্রিডিংয়ের ফলাফল স্বরূপ গরুটির জন্ম, এর আকৃতি আর বাড়ার সম্ভাবনা ছিল না। শিকড় অ্যাগ্রো ফার্মকে আগ্রহী মানুষের ভিড় বন্ধ করতে তিনি তখন নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও জানান।
"আমি তাদের বলেছি, খামারে এত মানুষকে আসতে দেওয়া ঠিক নয়। অনেকেই রোগের জীবাণু বহন করছেন, এতে করে রানির স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।"
- সূত্র- ডেইলি মেইল