রানি ভিক্টোরিয়ার খেয়াল: ভারতীয় ভৃত্য আবদুল যেভাবে হলেন রানির শিক্ষক!
১৯০১ সালের ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হলো। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেখা গেল, দল বেঁধে কয়েকজন লোক ভোরের ঊষালগ্নে হেঁটে চলছেন। এই ছোট্ট দলের সদস্যরা হলেন ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের সহধর্মিণী নতুন রানি আলেকজান্দ্রা, প্রিন্সেস বিয়াট্রিস এবং কয়েকজন প্রহরী। গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে বেরিয়েছেন তাঁরা। রাজপরিবারের এই দলটির গন্তব্য ফ্রগমোর কটেজ; যেটি মূলত রানি ভিক্টোরিয়ার শিক্ষক (মুনশি) আবদুল করিমের বাসভবন।
এক যুগের বেশি সময় ধরে রানি ভিক্টোরিয়া ভারতীয় এই তরুণকে বহু মর্যাদা-সম্মাননায় ভূষিত করেছেন, স্নেহে আগলে রেখেছেন। কিন্তু একইসাথে এই কারণেই আবদুল রাজপরিবারের বাকি সদস্যদের চক্ষুশূলেও পরিণত হয়েছিলেন। রানি তখন সদ্যপ্রয়াত হয়েছেন। আবদুলকে এক হাত নেওয়ার এ-ই তো সুযোগ। তা তাঁরা আর হাতছাড়া করলেন না।
সজোরে আবদুলের দরজায় কড়া নাড়লেন, ঘুমন্ত পরিবারকে সজাগ করলেন। দরজা খুললে দ্রুতই সেখানে ঢুকে পড়ে তাঁর নিরাপত্তা লঙ্ঘন করলেন। প্রহরীদের দেখে আবদুলের স্ত্রী বেজায় ভয় পেয়ে দ্রুত বোরখা গায়ে জড়ানোর জন্য দৌড় দিলেন। আবদুলের সাথে ভিক্টোরিয়ার যেসব চিঠি চালাচালি হয়েছিল, তা অনতিবিলম্বে রানির কাছে হস্তান্তর করার আদেশ দিলেন নতুন রানি। তাঁর কক্ষে থাকা ড্রয়ার সব লন্ডভন্ড করে প্রহরীরা তা থেকে চিঠি বের করে আনল।
আবদুলের কাকুতি-মিনতিকে কোনোরকম তোয়াক্কা না করেই তারা এসব করে গেল। শেষে চিঠিগুলোকে একসাথে জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দিল। তাতেই তারা ক্ষান্ত হয়নি অবশ্য। ফেব্রুয়ারির সেই কনকনে ঠান্ডা শীতের সকালে সেই 'ডিয়ার আবদুল' লেখা চিঠিগুলো যখন জ্বলছিল, তখন তারা গৃহের ভেতর প্রবেশ করে অন্যান্য যা পোস্টকার্ড আর নোট পেল, তা-ও জব্দ করে জ্বলন্ত আগুনে ফেলল। আবদুলের স্ত্রীও এসব বন্ধ করার জন্য অনেক অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু এই দম্পতি নিজেদের চোখের সামনেই রানি ভিক্টোরিয়ার স্বাক্ষরকৃত চিঠিগুলোকে আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাইভস্ম হয়ে যেতে দেখলেন।
ভিক্টোরিয়া আবদুলকে দিনে বেশ কয়েকবার চিঠি লিখতেন, সেখানে নিজেকে তিনি আবদুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সত্যিকারের বন্ধু লিখে স্বাক্ষর করতেন। কখনোবা উর্দুতেই সই দিতেন। উইন্ডসর, বালমোরাল কিংবা অসবোর্ন হাউস থেকে এই চিঠিগুলো আবদুলের কাছে পৌঁছাত। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো অগ্নিকুণ্ডে নিঃশেষ হয়ে গেল। পরের দিন রাজা এডওয়ার্ড আবদুলকে আদেশ দেন, তিনি যেন তাঁর মালামাল নিয়ে ভারতে চলে যান।
আবদুলকে ইতিহাস থেকে চিরতরে মুছে দেওয়ার চেষ্টাটাই এখানে স্পষ্ট। ১৩ বছর আগে রানি ভিক্টোরিয়ার সাথে আবদুল করিমের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যে সত্যিকার রূপকথা জন্ম নিয়েছিল, তার যবনিকাপাত এভাবেই ঘটল।
রানি ভিক্টোরিয়া এবং তাঁর তরুণ-সুদর্শন ভারতীয় অনুচর মুনশি আবদুল করিমের সম্পর্কের আখ্যান ব্রিটিশ রাজপরিবারের কাছে এতোটাই বিতর্কিত ও মানহানিকর মনে হয়েছিল যে রানির মৃত্যুর পর রাজপরিবারের ইতিহাস থেকে তারা সেটিকে মুছে দিতে চেয়েছিল। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ-এর মতে, ভিক্টোরিয়ার ছেলে এডওয়ার্ড নির্দেশ দিয়েছিলেন যে রানি ও আবদুলের মধ্যে যেসব চিঠি চালাচালি হয়েছিল, তা রাজপ্রাসাদেও পাওয়ামাত্র যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এমনকি ভিক্টোরিয়া-তনয়া বিয়াট্রিস তাঁর মায়ের জার্নালে যেখানে-যেখানে আবদুলের নামের উল্লেখ পেয়েছেন, সেগুলোকে মুছে দিয়েছেন। কাজটা মোটেও সহজ কিছু ছিল না। রানির সাথে আবদুলের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের সময়সীমা ছিল এক দশকের বেশি। তাছাড়া রানির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গীও ছিলেন আবদুল।
আবদুলের স্মৃতি মুছে দেওয়ার কাজটা এতটাই নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করা হয়েছিল যে এক শতাব্দী কেটে যাওয়ার আগপর্যন্ত তাতে কেউ কোনো ফাঁকফোকরও খুঁজে পায়নি। তবে রানির গ্রীষ্মকালীন বাসভবনে ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র ধরে একজন সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া ও আবদুলের সম্পর্কের অস্তিত্ব খুঁজে বের করেন।
এখন প্রশ্ন হতে পারে যে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা কেন তাঁদের দুজনের সম্পর্ককে এত বিতর্কিত একটি ঘটনা হিসেবে দেখেছেন? হ্যাঁ, ইংল্যান্ডের রানি একজন সাদামাটা ভৃত্যের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। হররোজ এর সম্পর্কের দেখা মেলে না।
ভিক্টোরিয়া ও আবদুলের পরিচয় কীভাবে হয়েছিল?
যে সাংবাদিক রানির গ্রীষ্মকালীন বাসভবন ভ্রমণ করে ভিক্টোরিয়া-আবদুলের বন্ধুত্বের সূত্র খুঁজে পান, তাঁর নাম শ্রাবণী বসু। সেটির ওপর ভিত্তি করেই তিনি লেখেন ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল: দ্য ট্রু স্টোরি অব দ্য কুইনস ক্লোজেস্ট কনফিডান্ট (২০১০)। তাঁর মতে, ১৮৮৭ সালে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রানি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন যেন ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে কর্মচারীদের পাঠানো হয়, যাঁরা তাঁর কাজে নিয়োজিত আছেন।
রানির সাম্রাজ্য সেসময় শিখরে অবস্থান করছে, পৃথিবীর এক-পঞ্চমাংশকে বিস্তৃত করে এগিয়ে চলছে সেটি। সেই অনুরোধকে মাথায় রেখেই ভারত থেকে যে দুজন ভৃত্যকে রানির কাছে উপহারস্বরূপ পাঠানো হয়েছিল, তাঁরা হলেন আবদুল করিম ও মুহাম্মদ বখশ। ভারতের আগ্রা থেকে হাসপাতালের একজন কর্মচারীর সন্তান আবদুল করিম ভৃত্য হিসেবে ইংল্যান্ডে যান।
রানির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকাই ছিল তাঁর কাজ। লাল কুর্তা ও সাদা পাগড়ি পরিহিত সুদর্শন তরুণ করিম রানিকে প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ করলেন। প্রথম দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ভিক্টোরিয়া লিখেছেন, করিমের মুখাবয়বে গুরুগম্ভীরতার একটা ছাপ আছে, এ ছাড়া তিনি সুঠামদেহী একজন। রানির পা ছুঁয়ে সালাম করে করিম একটি মোগল স্বর্ণমোহর তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলেন।
ভালোবাসার জগদ্বিখ্যাত অনন্য নিদর্শন তাজমহল, সেটি আগ্রায়। আবার করিম নামের এই তরুণও আগ্রারই মানুষ। রানি ভারত নিয়ে তাঁর কাছ থেকে জানতে আগ্রহী। তাই আদেশ দিলেন, তিনি যেন দ্রুতই ইংরেজি শিখে ফেলে। তাতে রানির সাথে সরাসরি বার্তালাপে সুবিধা।
করিম জানালেন, তিনি আগ্রার কারাগারে কর্মকর্তার কাজ করে এসেছেন। রানির কাছে অনুরোধও করেছিলেন যেন তাঁকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু রানি তাঁকে থাকার জন্য অনুরোধ করলেন। কারণ, ততদিনে তিনি রানির প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন। তাঁর আরেক ঘনিষ্ঠ সঙ্গীজন ব্রাউনের মৃত্যুর পর প্রায় অশীতিপর এই সম্রাজ্ঞীরসাহচর্যে কাজ করা শুরু করলেন করিম।
তাঁদের সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠল
সুবর্ণজয়ন্তীর কিছু সময় পরই রানিকে তাঁর আইল অব উইটের বাসভবনে করিম মুগ্ধ করেছিলেন খাবারের মাধ্যমে। ভিক্টোরিয়া মুখরোচক রন্ধনশৈলী ব্যঞ্জনের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। করিম তাঁর নিজস্ব মসলার বাক্স নিয়ে রাজরসুইঘরে ঢুকে রানিকে মুরগির মাংসের তরকারি রেঁধে দিলেন। বাজিমাত করলেন। রানি খুবই পছন্দ করেছিলেন সেটি।
রানির বায়োগ্রাফার এ এন উইলসনের মতে, মুনশির রান্না করা মুরগির মাংসের তরকারি এবং ডাল-পোলাও খেয়ে রানি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি সেটিকে পরবর্তী সময়ে তাঁর নিত্যদিনের খাদ্যাভ্যাসে সংযোজন করে নিয়েছিলেন। ভারতীয় সংস্কৃতিতে ভিক্টোরিয়ার আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
একপর্যায়ে তিনি করিমের কাছে উর্দুও শিখতে চান। ভিক্টোরিয়া তাঁর দিনপঞ্জিতে লিখেছেন, ভৃত্যের সাথে কথা বলার জন্য তিনি হিন্দুস্তানি (বর্তমানে উর্দু) ভাষার কিছু শব্দ শিখছেন। এই ভাষা, ভাষাভাষী লোকজন এবং সংস্কৃতিÑসবকিছুই তাঁর কাছে আগ্রহের, সেটি লিখতেও তিনি ভোলেননি। করিমের সাথে যেন তিনি সরাসরিভাবে কথা বলতে পারেন, এজন্য রানির আদেশানুসারে করিম দ্রুতগতিতে ইংরেজি শেখা শুরু করেন।
বসুর মতে, রানি ভিক্টোরিয়া মুনশির প্রতি মুগ্ধ হয়েছিলেন একটা বিশেষ কারণে। রানিকে সবাই স্রেফ রানি হিসেবে দেখলেও মুনশি তাঁকে একজন মানুষ হিসেবেই প্রাধান্য দিয়েছেন। সবাই রানিকে ভয় পেতেন, তাঁর থেকে একটা দূরত্ব অবলম্বন করতেন, এমনকি তাঁর সন্তানেরাও। কিন্তু এই ভারতীয় লোকটি তাঁর সরলতার মহিমাতেই রানির কাছে বিশেষ হয়ে উঠেছিলেন।
তিনি ভারত, ভারতে তাঁর ফেলে আসা পরিবার এবং সংস্কৃতির সাথে রানির পরিচয় ঘটান। আর রানির নিজ পরিবারকে নিয়েও যা আক্ষেপ-নালিশ থাকত, তা-ও তিনি একজন মনোযোগী শ্রোতা হয়ে শুনতেন। রানি তাই মুনশির নম্রতা-সরলতার তারিফ করে ডায়েরিতে তাঁর অনুরাগের কথা লিখেছেন।
তাঁদের মধ্যে কতটা ঘনিষ্ঠতা ছিল
আবদুলের ব্রিটেনে আগমনের পর থেকে ১৯০১ সালে রানির মৃত্যুর আগপর্যন্তÑএই মাঝামাঝি সময়ে রানি যেসব চিঠি লিখেছেন, তাতে তিনি 'তোমার স্নেহময়ী মা' এবং 'তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু' হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন। বিবিসিকে ২০১১ সালে দেওয়া শ্রাবণী বসুর সাক্ষাৎকার থেকে এটি জানা যায়। নিঃসন্দেহে এখানে দুজনের মধ্যে একে অপরের প্রতি প্রবল অনুরাগের উপস্থিতি ছিল। সম্পর্কটির বিভিন্ন পরতের মধ্যে মা-সন্তানসুলভ সম্পর্কটিই হয়তো সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
রানির স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর তিনি বলেছিলেন, অ্যালবার্ট একইসাথে তাঁর স্বামী, ঘনিষ্ঠ সহচর, বাবা ও মায়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। হয়তো মুনশি আবদুল করিমও রানি ভিক্টোরিয়ার জীবনে এমন কোনো একজনই ছিলেন। তবে করিমের বংশধরদের যাঁরা করিমের দিনপঞ্জিটি পড়েছেন, তাঁদেরও দাবি যে দুজনের মধ্যে যে সম্পর্ক বিরাজ করেছে, তা মোটাদাগে প্লেটোনিক এবং খুব সম্ভবত মা-সন্তানের সম্পর্কের অনুরূপই।
২০১০ সালে আবদুল করিমের বড় দৌহিত্র জাভেদ মাহমুদ দ্য টেলিগ্রাফকে জানান যে আবদুল ও ভিক্টোরিয়ার মধ্যে মা-সন্তানের সম্পর্কটিই বিরাজমান ছিল। মূলত আবদুলের কারণেই তিনি ভারতবর্ষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্যদের ঈর্ষা ও জাত্যাভিমানের কারণে তাঁরা সেটিকে তীর্যকভাবে দেখেছেন।
মুনশি কী ধরনের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পেতেন
যদিও করিমকে একজন ভৃত্য হিসেবে পাঠানো হয়েছিল, তাঁর আগমনের বছরখানেকের মধ্যেই রানি তাঁর পদোন্নতি করলেন। তাঁকে নিজের শিক্ষক বানিয়ে মুনশি খেতাব দিলেন। তখন করিম মাইনে হিসেবে পেতেন ১২ পাউন্ড। পরবর্তী সময়ে মুনশি সম্মানজনক একজন সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা করিমের সকল চিত্রকর্ম নষ্ট করে দেওয়া হলো। সবাই যেন তাঁকে মুনশি নামে ডাকেন, সেই আদেশ দিলেন রানি। মুনশির প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন দুই অস্ট্রীয় শিল্পীÑরুডলফ সুয়োবোডা ও হাইনরিখ ফন আঙ্গেলি।
বসুর মতে, রাজসভায় তরবারি নিয়ে এবং মেডেল পরে হাঁটাচলা করার অনুমতি ছিল আবদুলের। এমনকি ভারত থেকে পরিবারের সদস্যদের ইংল্যান্ডেও আনতেন তিনি, যেটি ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে। এ ছাড়া রানি ধূমপান খুব অপছন্দ করলেও করিমের বাবা উইন্ডসর প্রাসাদে প্রথম হুক্কা খেয়েও পার পেয়ে গিয়েছিলেন।
আবদুল করিম বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর সহধর্মিণীকে রানি স্নেহের চোখেই দেখেছেন। নিজের সহধর্মিণীর কাছে আগ্রায় ফিরে যাওয়ার বাসনার কথা আবদুল রানিকে জানালে, রানি তাঁর স্ত্রীকে ইংল্যান্ডে দাওয়াত দেন। ইংল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাজকীয় সম্পত্তিতে রানি তাঁদের বেশ কয়েকটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। এ ছাড়া ভারতবর্ষেও জায়গা দিয়েছিলেন তাঁদের। সংসারধর্ম নিয়েও বহু মূল্যবান উপদেশ আবদুল রানিকে দিয়েছেন বলেও জানা যায়।
ঐতিহাসিকদের মতে, ভিক্টোরিয়ার পরিবারের সদস্য এবং কর্মচারীরা জাতপাত নিয়ে বেশ গোঁড়ামি ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিলেন। আর ভিক্টোরিয়ার সাথে যখন আবদুলের বন্ধুত্ব তৈরি হলো, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই গোঁড়ামি ও কুসংস্কারে নতুন করে যোগ হয় ঈর্ষা। কারণ, রানির ঘনিষ্ঠ অনুচর হওয়ার সুবাদে আবদুল পেতেন বেশ কিছু সুবিধা।
যেমন রানি ইউরোপে ভ্রমণ করতে গেলে সাথে থাকতেন আবদুল। অপেরা বা বিশাল কোনো ভোজে পাশে বসার সুযোগটাও পেতেন আবদুল। আর উপাধি, সম্মাননা কিংবা উপঢৌকন তো আছেই। অর্থাৎ রানি যেখানেই যাচ্ছেন, তাঁর সঙ্গী হিসেবে সাথে থাকছেন আবদুল, বিনিময়ে তিনি ঢের বেশি সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছেন।
উইন্ডসর ও অসবোর্নে তাঁকে বাসভবন দেওয়ার পাশাপাশি বালমোরালে তাঁর জন্য 'করিম কটেজ' তৈরি করিয়েছিলেন রানি। রাজকীয় রেলগাড়িতেও মুনশির জন্য রানির পাশাপাশি একটি ব্যক্তিগত কামরা বরাদ্দ থাকত। কিন্তু এসব নিয়ে রাজপরিবারের লোকজনের মধ্যেই বহু কুৎসা রটনা ও গালগল্প জারি ছিল।
আবদুল করিমের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতেন রানি, পাশাপাশি করিমের বাবা যেন পেনশনের টাকা পান, সেটির ব্যবস্থাও করেছিলেন। একইসাথে করিমের বেশ কিছু চিত্রকর্মের কমিশনও খোদ রানি করেছিলেন। মূলত সেটির সূত্র ধরেই দুজনের সম্পর্কের গভীরতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে।
ইতিপূর্বে রানির সঙ্গী ছিলেন স্কটিশ জন ব্রাউন। রানির স্বামী অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর ব্রাউনই তাঁর জীবনে শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করেছিলেন। ব্রাউনের মৃত্যুর পর করিমই রানিকে সঙ্গ দিতেন। রানির সভাসদেরা ব্রাউনের সাথে রানির সম্পর্ককেই বাঁকা চোখে দেখতেন। সেখানে একজন ভারতীয় ভৃত্যের মধ্যে রানি একজন বন্ধুকে খুঁজে পাবেন, তা তাঁরা মেনেই নিতে পারছিলেন না।
ঐতিহাসিক ক্যারলি এরিকসন তাঁর হার লিটল ম্যাজেস্টিতে লিখেছেন, 'শ্যামবর্ণের একজন ভারতীয় ভৃত্য রানির শ্বেতাঙ্গ ভৃত্যদের মধ্যে থাকবে, একই টেবিলে বসে খাবে, দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠবে, তা তাদের কাছে ছিল অসহনীয়। এই আস্পর্ধাকে মেনে নেওয়া তাদের জন্য ছিল কষ্টকর।'
তবে ভিক্টোরিয়া কি তাঁর প্রাসাদে বিদ্যমান এই বর্ণবাদী আচরণ ও বিরোধের ব্যাপারটি টের পেয়েছিলেন? হ্যাঁ, অবশ্যই তিনি ঠাওর করেছেন। রানি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর পর মুনশির ওপর তাঁর পরিবারের সদস্যরা আক্রমণ করার জন্য ওত পেতে আছেন। তিনি মুনশির জন্য একটা ব্যবস্থা করে যেতে চেয়েছিলেন।
ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড ল্যান্সডাউনকে চিঠিতে লিখেছিলেন, মুনশির জন্য যেন বিশালাকৃতির জমি বরাদ্দ রাখা হয়। রাজপরিবারের লোকজন অবশ্য এসব সইতে পারতেন না এবং মুনশি যেসব সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করছেন, তার প্রতি খুবই ঈর্ষান্বিত ছিলেন। মুনশি একজন গুপ্তচর, এরকম কুৎসা প্রচারও করেছিলেন তাঁরা।
মুনশি যখন রোগাক্রান্ত এবং চিকিৎসা নিচ্ছেন, তখন রানির হীরকজয়ন্তীর উৎসব শুরু হবে। সভাসদেরা ঠিক করলেন, কোনোভাবেই তাঁকে রানির সাথে ভ্রমণ করতে দেওয়া যাবে না। আর যদি রানি তা না মানেন, তবে তাঁরা সদলবল পদত্যাগ করবেন। কিন্তু সেই যাত্রাতেও রানির সাথে তাঁরা তর্কে পেরে ওঠেননি এবং হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন। রানিও ফ্রান্সের দক্ষিণাংশের ভ্রমণে মুনশিকে নিয়েই বের হয়েছিলেন।
প্রিন্স অব ওয়েলসও রানিকে চাপ দিয়েছিলেন যে তাঁর কথায় কর্ণপাত না করলে তিনি নিজের মাকে পাগল দাবি করে তাঁর জায়গা নিয়ে নেবেন। তবে রানি সেসবের ধার ধারেননি। মুনশির পাশে থেকে তাঁকে সমর্থন তো দিয়েছেনই, একইসাথে সভাসদকে তাঁদের বর্ণবাদ ও জাত্যাভিমানের জন্য তিরস্কারও করেছিলেন।
ভিক্টোরিয়ার সহকারী সচিব ফ্রিটজ পনসনবির একটি চিঠি থেকে জানা যায় যে ভিক্টোরিয়া নিজেও মনে করতেন যে প্রাসাদের বাকি লোকজন মুনশিকে সমান চোখে দেখেন না। বরং বাকিরা তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিতই। মুনশিকে যেন সবাই শ্রদ্ধা করেন, সেই আদেশ দেন তিনি।
তাঁকে নাইট উপাধি দেওয়ার কথা ভাবলেও শেষতক আর তা করেননি তিনি। বরং মেম্বার অব দ্য ভিক্টোরিয়ান অর্ডার খেতাবে ভূষিত করেন। অশীতিপর রানির সভাসদের ততদিনে বুঝতে বাকি রইল না যে করিমের সাথে তাঁদের পেরে ওঠা সম্ভব নয়। রানির বয়স বাড়লেও তিনি করিমকে যেরকম সমর্থন দিয়ে চলছেন, তাতে তাঁরা সুবিধা করে উঠতে পারছেন না।
তাঁদের বিদায়বেলায় কী ঘটেছিল
মৃত্যুর পর উইন্ডসর রাজপ্রাসাদে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যেন পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের ক্ষুদ্র পরিমণ্ডলটিতে আবদুলও থাকেন, তার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করে গিয়েছিলেন রানি। ভিক্টোরিয়াপুত্র এডওয়ার্ড কথাটি রেখেছিলেন। রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন আবদুল এবং ভিক্টোরিয়ার কফিন চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার আগে তিনিই সর্বশেষ মানুষ হিসেবে তাঁকে দেখার অনুমতি পেয়েছিলেন।
তবে স্মিথসোনিয়ানের মতে, যেখানে আবদুল ও তাঁর স্ত্রী থাকতেন, সপ্তম এডওয়ার্ডের আদেশানুসারে, সেখানে লোকবল গিয়ে রানি ও আবদুলের মধ্যে যেসব চিঠি আদান-প্রদান হয়েছিল, তা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। এমনকি আড়ম্বরবিহীনভাবে করিমকে ইংল্যান্ড থেকে প্রস্থান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
অর্থাৎ রানির মৃত্যুর পরই রাজপরিবার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রতিশোধটা নিয়ে নিলেন। পাশাপাশি অন্য সকল ভারতীয় ভৃত্যকেও রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করার আদেশ দেওয়া হলো। রাজপ্রাসাদে আর পাগড়ি কিংবা রসুইঘরে আর ভারতীয় রন্ধনশৈলীর দেখা মিলল না। শুরু হলো নতুন এডওয়ার্ডিয়ান যুগ।
লোকচক্ষুর অন্তরাল থেকে আখ্যানটি বেরিয়ে এল কীভাবে
২০০৩ সালে রানির গ্রীষ্মকালীন আবাস ভ্রমণকালে শ্রাবণী বসু বেশ কয়েকটি চিত্রকর্ম দেখতে পান, সেখানে রানির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন একজন ভারতীয় ভৃত্য। তবে দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া ২০১৭ সালের সাক্ষাৎকারে বসু জানান যে প্রতিকৃতি দেখে তাঁর মনে হয়নি যে আবদুল করিম কোনো ভৃত্য। অসবোর্ন হাউসের ইন্ডিয়ান করিডরে থাকা চিত্রকর রুডলফ সুয়োবোডার আঁকা একটি প্রতিকৃতিতে একজন সুদর্শন তরুণকে দেখা যায়, যিনি কিছু নিয়ে ভাবছেন। হাতে তাঁর একটি বইও আছে। তাঁকে ভৃত্যের চেয়ে নবাবের মতো বলেই বেশি মনে হচ্ছে। একটু হেঁটে সামনে গেলেই চোখে পড়ে আরেকটি ছবি,যেখানে আবদুলের চাহনি আরেকটু স্নিগ্ধ ও নম্র।
তাঁকে যেভাবে আঁকা হয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, তিনি উচ্চবর্গীয় সভাসদেরই একজন। অসবোর্ন হাউসে জন ব্রাউনের প্রতিকৃতিও আছে। গাইডের কাছ থেকে জানা যায়, রানির আদেশানুসারেই সেখানে এই প্রতিকৃতিগুলোকে ফ্রেমে বাঁধাই করে সাজানো হয়েছিল। তাই এটা আর বুঝতে বাকি থাকে না যে ব্রাউন রানির কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ একজন ছিলেন, করিমও অমন বিশেষ কোনো একজনই হবেন। অসবোর্নের দরবার কক্ষে ঢুকলে রানির ভারতের প্রতি ভালোবাসাটাকে বোঝা যায়।
বসু সেসব চিত্রকর্ম দেখেই খোঁজাখুঁজির কাজে লেগে পড়লেন এবং দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তদন্তকাজ চালান। উইন্ডসর প্রাসাদে গিয়ে সেসময় তিনি ঘেঁটেছেন ভিক্টোরিয়ার হিন্দুস্তানি জার্নালগুলোওÑকরিম মূলত যেসব খাতা ভিক্টোরিয়াকে উর্দু শেখাতে ব্যবহার করতেন, সেসব।
খুব অল্পসংখ্যক লোকই জানতেন যে রানি আবদুলের কাছ থেকেই উর্দু বলতে ও লিখতে শিখেছিলেন। ১৩ বছর ধরে রানি দিনপঞ্জিতে লিখেছেন। বসুর মতে, এর আগপর্যন্ত কেউই সেসব দেখেননি। দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে সেসব অনুশীলন খাতা কেউই ছোঁয়নি।এর কারণ সম্ভবত এমন হতে পারে যে ভিক্টোরিয়ার বায়োগ্রাফার যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই-ই পশ্চিমের।
স্বাভাবিকভাবেই উর্দু তাঁদের জানা ছিল না। সেসব তাই কখনো অনূদিত হয়নি। এই দিনপঞ্জিগুলোর হাত ধরেই শ্রাবণী বসুর চোখের সামনে তাঁদের দুজনের সম্পর্ক জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। অনেক চিঠি পুড়িয়ে ফেললেও কিছু থেকে গিয়েছিল এবং সেসব রয়্যাল আর্কাইভে জায়গা করে নিয়েছে।
দ্য টেলিগ্রাফ-এর মতে, বালমোরালে থাকা অবস্থায় রানির লেখা ১৩ খণ্ডের জার্নাল বসু পড়েন। সেখানে রানি বালমোরালে থাকা অবস্থায় তাঁর হিন্দুস্তানি অনুশীলন, অসুস্থ থাকা অবস্থায় আবদুলকে দেখতে যাওয়া, ভারত থেকে আবদুলের স্ত্রীকে দাওয়াত দিয়ে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসার কথা লিখেছেন। ভারতের প্রতি রানির আগ্রহ সেখানে স্পষ্ট, আম খাওয়ার বিশেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর। আর আবদুলকে তিনি দেখতেন তাঁর সমকক্ষদের মতো। রানির ব্যক্তিগত চিকিৎসক স্যার জেমস রিডের ডায়েরি, রাজসভার লোকজন এবং ভারতের ভাইসরয়দের চিঠি চালাচালি থেকেই বোঝা যায় যে করিমকে নিয়ে সবাই চিন্তিত ছিলেন।
করিমের জন্মস্থান আগ্রা। তবে ২০০৬ সালের আগপর্যন্ত তাঁর ব্যাপারে কেউই কিছু শোনেননি। এমনকি করিমের সমাধিও ছিল বেশ পরিত্যক্ত, লোকজনের আনাগোনা তাতে একেবারে নেই বললেই চলে। তবে তাঁর সমাধিফলকের ওপর তাঁর তারিফ করে লেখা হয়েছে যে তিনি নিজ গুণে ইংল্যান্ডের রানির শিক্ষকে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর সম্মাননাগুলোও সেখানে ঠাঁই পেয়েছে। অথচ ততদিনে তিনি জনমনে বিস্মৃত। রানির জীবনের যে অংশটুকুকে মুছে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করা হয়েছিল, যেটি তাঁর যাপিত জীবনের ভিন্ন একটি বাঁক, তা উঠে আসে শ্রাবণী বসুর এ তদন্তে।
ভিক্টোরিয়া করিমকে আগ্রার যেখানে জায়গা দিয়েছিলেন, সেখানে থাকত সনাতন ধর্মালম্বী একটি পরিবার। তাদের কাছ থেকে জানা যায় যে ভারতভাগের সময় করিমের পরিবার পাকিস্তান চলে যায়। সেখানে করিমের কোনো সন্তানসন্ততি না থাকায় তাঁর উত্তরাধিকার খোঁজা হয়ে ওঠে আরও দুঃসাধ্য।
শ্রাবণী বসু ২০১০ সালে তাঁর ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল বইটি প্রকাশ করেন। বইটির খোঁজ পেলে কেউ না কেউ তাঁর সাথে যোগাযোগ করবেন, এ আশাতেই কাজটি করেছিলেন তিনি। মাসখানেকের মাথায়ই করিমের পরিবারের একজন সদস্য বসুর সাথে যোগাযোগ করেন। করিমের সন্তানের দৌহিত্র বসুকে জানান, তাঁর ডায়েরি করাচিতে আছে। ডায়েরিটির সন্ধান পেয়ে বসুর যেন মনে হলো, করিমের বিস্মৃত কণ্ঠস্বরটি খুঁজে পাওয়া গেল।
ওয়ার্কিং টাইটেলের মতো জনপ্রিয় ব্রিটিশ ফিল্ম স্টুডিও এই অনন্যসাধারণ বন্ধুত্বের আখ্যান নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মাণ করে ফেলে। স্টিফেন ফ্রেয়ার্স নির্মিত একই নামের এই ড্রামা ঘরানার ফিল্মটিতে রানি ভিক্টোরিয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী ডেম জুডি ডেঞ্চ। আর আবদুল করিমের ভূমিকায় আছেন ভারতীয় অভিনেতা আলী ফজল। বইয়ের মতো ফিল্মটির শুরুও ১৮৮৭ সালে, রানির সিংহাসনে আরোহণের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশাল আয়োজনকে ঘিরে।
ভারতবর্ষের আগ্রায় ফিরে করিম অনাড়ম্বরভাবে জীবনযাপন শুরু করেছিলেন। কিন্তু অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। দীর্ঘসময় রানির সাহচর্যে থাকার পরও তাঁর সাথে যেরকম আচরণ করা হলো, তা তাঁর কাছে কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। রানির মৃত্যুর আট বছর পর করিমও ৪৬ বছর বয়সে আগ্রায় মৃত্যুবরণ করেন।
রানির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর থাকা সত্ত্বেও ইতিহাস থেকে তাঁকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হলো, রানির দেওয়া উপঢৌকনগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হলো। এখনো পরিত্যক্ত হয়ে আছে তাঁর সমাধিক্ষেত্র। তাঁর স্ত্রীও করাচিতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে মারা যান। কিন্তু রাজা এডওয়ার্ড তাঁকে বিস্মৃত করার চেষ্টা করলেও তাঁর ডায়েরিটি থেকে গিয়েছিল। মূলত সেখান থেকেই যেন তাঁর ব্যক্তিসত্তাকে আবার খুঁজে পাওয়া গেল।
আবদুল করিম রানির সিংহাসনে আরোহণের সুবর্ণজয়ন্তী থেকে হীরকজয়ন্তী পর্যন্ত মাঝামাঝি সময়ে থাকা জার্নালে লিখেছেন,'একটি অচেনা ভূমিতে অপরিচিত লোকজনের মধ্যে আমি পরবাসী হিসেবে আছি। আমার সুপ্রসন্ন ভাগ্যের পেছনে রানির অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের রানির ওপর তৃপ্ত হয়ে সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান এবং পুরস্কারে ভূষিত করেন, সেই প্রার্থনাই আমি করি।'