রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়: আন্দোলনরত ২ শিক্ষার্থীর আত্মহনন চেষ্টা
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের হাতে ছাত্রদের চুল কাটার ঘটনায় আবারও আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
আজ (রোববার) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে একাডেমিক ভবনের সামনে এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সিরাজগঞ্জ-নগরবাড়ি মহাসড়কের বিসিক মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ অবস্থায় মহাসড়কের দু'পাশে যানজট লেগে যায়। ঘণ্টাখানেক পর অবরোধ তুলে নেন তারা।
আত্মহত্যার চেষ্টারকারীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র শামীম হোসেন কীটনাশক পান করেন এবং একই বিভাগের শিক্ষার্থী আবেদ হোসেন ব্লেড দিয়ে হাত কাটেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, 'আজ বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করার বিষয়ে গত রাতে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ কারণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে রেজিস্টার সোহরাব হোসেনসহ আমরা একাডেমিক ভবনের সামনে গিয়েছিলাম। কিন্তু আলোচনা চলার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী শামিম কীটনাশক পান করে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এরপর শিক্ষকদের একটি অংশ দ্রুত তাকে পোতাজিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই শিক্ষার্থী আবেদ ব্লেড দিয়ে হাত কাটেন। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।'
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র জাহিদুর রহমান শিরাত বলেন, 'অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুপাশে যানজট লেগে গিয়েছিল। জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি চিন্তা করে আমরা ঘণ্টাখানেক পর অবরোধ তুলে নিয়েছি। আমরা আবার ফিরে গিয়ে একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেব। যে পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানকে স্থায়ী বরখাস্ত না করা হবে, আমাদের আন্দোলন চলবে।'
এর আগে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলে একাডেমিক ভবনের সামনেই আত্মহত্যা করবেন বলে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর ফেসবুক লাইভে এসে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থী শামিম, যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।
ওই সময় লাইভে তিনি বলেন, 'আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সর্বপরি আমরা কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করেছি। তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। আমরা তাদের কথামতো আন্দোলন শিথিলও করেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চুল কাটার বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রমাণাদি পাওয়ার পরও তাকে স্থায়ী বরখাস্ত করতে গড়িমড়ি করছেন। মুলতবি হওয়া সিন্ডিকেট সভা কবে হবে, এ বিষয়ে কবে সিদ্বান্ত নেওয়া হবে, আমাদের কিছুই জানানো হচ্ছে না। আমরা চরম আশাহীনতায় ও ধোঁয়াশায় ভুগছি। আমাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, সবাই আস্থাহীনতায় ভুগছি। প্রতিটি শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ নিয়ে আতংকে আছি। এভাবে কোনো শিক্ষাজীবন চলতে পারে না। কর্তৃপক্ষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের দমনের চেষ্টা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের শিক্ষাজীবনের নিশ্চয়তা দিতে না পারেন, তাই চরম আস্থাহীনতা ও প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অন্যরা কী করবে জানি না, তবে আমি নিজে আত্মহত্যা করব। আর এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।'
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার (ভারপ্রাপ্ত ভিসি) আব্দুল লতিফ রোববার সকালে টিবিএসকে বলেন, 'শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘোষণা দেওয়ার কথা শুনেছি। আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যাব। তাদের বোঝানোর জন্য চেষ্টা করব।'
অভিযুক্ত শিক্ষিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কিছু বিষয়ে আরও জানতে সময়ের প্রয়োজন হওয়ায় সিন্ডিকেট সভা মুলতবি করা হয়েছে। ওই সভায় সচিবরা থাকেন, তারাও ঘটনা সর্ম্পকে পরিষ্কার ধারণা নিচ্ছেন, এজন্য সময় লাগছে। এটা শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে।' তবে দুই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা চেষ্টার পর তাকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সোহরাব আলীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। আরও কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ বাকি রয়েছে জানিয়ে সিন্ডিকেট সভা মুলতবি করা হয়। এদিন রাত থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে আবারও আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এদের মধ্যে সাতজন আমরণ অনশন ও বাকিরা দিনরাত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
এর আগে, ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের ১৬ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে। অপমান সহ্য করতে না পেরে ২৭ সেপ্টেম্বর নাজমুল হাসান তুহিন নামে এক ছাত্র অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে সিন্ডিকেট সভা শেষে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতেই থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা।