রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে আমরণ অনশনসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পাটকল শ্রমিক নেতারা এ ঘোষণা দেন।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা নিজ নিজ মিলের সামনে মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। এর আগে একই দাবিতে সোমবার সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পাটকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কোনো অবস্থাতেই মিল বন্ধ করতে দেওয়া হবে না।
তারা বিজেএমসি পুনর্গঠন করে মিল চালু রাখার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
এদিন বক্তৃতা করেন প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, সাবেক সভাপতি কাউসার আলী মৃধা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, সেলিম আকন, আবুল কালাম জিয়া, নূরুল হক, বেল্লাল হোসেন, শুকুর আলী প্রমুখ।
অন্যদিকে, চলমান সমস্যা নিরসনে দেশের ২৫টি পাটকলের সিবিএ নেতারা সোমবার রাতে ঢাকায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠক চললেও কোনো সুরাহা হয়নি।
বৈঠকে যোগ দেওয়া প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ'র সভাপতি সাহানা শারমিন জানান, কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর নিকট শ্রমিকদের মিল চালু রখাসহ বিভিন্ন দাবির বিষয়ে জানানো হয়েছে। তবে তেমন কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। এ কারণে দাবি আদায় না হওয়ায় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রক্ষা সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সরদার আব্দুল হামিদ বলেন, হঠাৎ করেই মিল বন্ধ হলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সকলকে পথে বসতে হবে।
তিনি বলেন, মিল বন্ধের এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, স্টার, প্লাটিনাম, ইস্টার্ন, দৌলতপুর, খালিশপুর, জেজেআই, আলিম ও কার্পেটিং জুট মিলে আট হাজার ১০০ স্থায়ী শ্রমিক ও প্রায় ১৫ হাজার অস্থায়ী শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।
খুলনার পাটকলসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সকল পাটকল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে সরকার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সোমবার সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু
আবুল কালাম (৫৭) নামে প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের এক শ্রমিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মিলের শ্রমিকরা জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় ফেসবুকে চাকরিচ্যূতির চিঠি দেখতে পেয়ে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের তাঁত বিভাগের শ্রমিক খেলায়েত হোসেন খান জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় আবুল কালাম ফেসবুকে দেখতে পান, চাকরি ছাটাই হলে প্রথম বছরে ৪০ ভাগ, পরের বছরে ৩০ ভাগ ও তার পরের বছরে আর ৩০ভাগ টাকা পরিশোধ করা হবে। যেহেতু এর আগে অবসরে যাওয়া শ্রমিকরা এখনো টাকা পায়নি, সে কারণে তিনি হতাশ হয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং ঘটনাস্থলে মারা যান।
খেলায়েত হোসেন খান আরও বলেন, আমাদের ছাটাই করা হলে আমরা টাকাও পাব না, মিলেও ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমরা শুভঙ্করের ফাঁকিতে পড়ব।