র্যাবের অভিযানে মধ্যপ্রাচ্যে মানব পাচারকারী চক্রের হোতাসহ ৮ সদস্য গ্রেপ্তার
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/10/13/arrest-tbs.jpg)
মুদি দোকানদার থেকে ওভারসিজ প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা টুটুল ও সহযোগী তৈয়বসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন নারী ভিকটিমের অভিভাবক র্যাব-৪ কে মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচার সংক্রান্ত অভিযোগ জানায়। ফলশ্রুতিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ (১৩ অক্টোবর) র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল বাড্ডা থানাধীন লিংক রোডস্থ টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজে অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা টুটুল ও সহযোগী তৈয়বসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
অভিযান চালিয়ে ৪ জন ভিকটিম (২ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী), ১০টি পাসপোর্ট, ৭টি ফাইল, ৪টি সীল, ১৭টি মোবাইল, ৫টি রেজিস্টার, ৩টি মোবাইল সিম, ৪টি ব্যাংকের চেক বই, ২টি কম্পিউটার, ৩টি লিফলেট এবং নগদ ১০,০৭০ টাকা উদ্ধার করে এলিট ফোর্সটি।
অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোঃ সাইফুল ইসলাম টুটুল (৩৮), জেলা-মেহেরপুর; মোঃ তৈয়ব আলী (৪৫), জেলা- রংপুর; শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন (৩৮), জেলা- গোপালগঞ্জ; মোঃ মারুফ হাসান (৩৭), জেলা- পটুৃয়াখালী; মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), জেলা- মেহেরপুর; মোঃ লালটু ইসলাম (২৮), জেলা- মেহেরপুর; মোঃ আলামিন হোসাইন (৩০), জেলা- শরীয়তপুর এবং মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন (৫৪), জেলা- কুষ্টিয়া।
মুদি দোকানদার থেকে ওভারসিজ প্রতিষ্ঠানের মালিক
গোপন অনুসন্ধানে দেখা যায়, এইচএসসি পাশ টুটুল মেহেরপুরের গাংনী থানাধীন কামন্দী গ্রামে মুদি দোকানদার হিসেবে কাজ করতো। মাঝে মাঝে ঢাকায় আসত। অতি অল্পসময়ে অধিক টাকার মালিক হওয়ার লোভে ধীরে ধীরে মানবপাচারকারী চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং চক্রের দালাল হিসেবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করতে থাকে। পরবর্তীতে নিজেই রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় প্রতারণামূলকভাবে "টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজ" নামে ৩টি ওভারসিজ এজেন্সির অফিস খুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু নারী-পুরুষকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তাদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করে টুটুল।
টুটুলের এই প্রতারণার কাজে অন্যতম দালাল বা সহযোগী আবু তৈয়ব। পড়াশোনা না জানা তৈয়ব চায়ের দোকানদারি করতো। টুটুলের প্ররোচনায় মানব পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং বহু লোককে প্রতারণামূলকভাবে বিদেশে প্রেরণ এবং দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়ার নামে টাকা পয়সা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তৈয়ব নিজেকে দেশের একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে চাকুরী এবং দেশের নামী-দামী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকুরী দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েকজন ভিকটিমকে চাকরি প্রদানের ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত মানবপাচার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন (৩৮) ও মোঃ মারুফ হাসান (৩৭) বেতনভুক্ত কর্মচারী। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), মোঃ লালটু ইসলাম (২৮), মোঃ আলামিন হোসাইন (৩০), মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন (৫৪)-এরা মাঠ পর্যায়ে টার্গেট সংগ্রহ, প্রার্থীর পাসপোর্টের ব্যবস্থা, কথিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, টাকা সংগ্রহ, প্রাথমিক মেডিকেলের কাজ সম্পূর্ণ করাসহ অন্যান্য কাজে সহায়তা করত।
এই পাচারকারী চক্রের কিছু সদস্য দেশের বেকার ও অস্বচ্ছল যুবক-যুবতীদের সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ বিভিন্ন দেশের বাসাবাড়ীতে লোভনীয় বেতনে কাজ দেওয়ার নাম করে রাজি করিয়ে ঢাকায় নিয়ে এই চক্রের মূল হোতা টুটুল ও তৈয়বের কাছে নিয়ে আসে।
টুটুল ও তৈয়ব তাদের অফিসে সংগৃহীত ভিকটিমদের বিদেশে বাসাবাড়ীতে কাজের নামে পাঠানোর উদ্দেশ্যে ভুয়া মানি রিসিপ্ট প্রদান করে ভিকটিম প্রতি ২-৫ লাখ টাকা করে নিত।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।