বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর মানব পাচারকারী গ্রেফতার
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর ইউরোপের অন্যতম কুখ্যাত মানব পাচারকারীকে ইরাক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বারজান মাজিদ নামের ঐ ব্যক্তিকে রবিবার (১২ মে) সকালে ইরাকের কুর্দিস্তান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জ্যেষ্ঠ একজন সরকারি কর্মকর্তা।
বেশ কয়েক বছর ধরে মাজিদ ও তার দলের সদস্যরা ইংলিশ চ্যানেল জুড়ে নৌকা ও লরি ব্যবহার করে ব্যাপকভাবে মানব পাচারের মতো বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল।
সম্প্রতি কুর্দিস্তানের সুলায়মানিয়া শহরে মাজিদের সন্ধান পায় বিবিসি। সেখান থেকে তিনি কয়েক হাজার অভিবাসীকে ইংলিশ চ্যানেল পার করিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
স্করপিয়ন নামে পরিচিত মাজিদ কতজনকে এখন পর্যন্ত পাচার করেছেন সে প্রশ্নের জবাবে বলেন, "এক হাজারও হতে পারে, আবার দশ হাজারও হতে পারে। আমি জানি না, আমি কখনো গণনা করে দেখিনি।"
কুর্দিস্তানের স্থানীয় সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, মানব পাচারকারী চক্রের ওপর সম্প্রতি বিবিসি যে অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সেটির সূত্র ধরেই তারা মাজেদকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
ঐ কর্মকর্তা বলেন, "রবিবার সকাল সাতটার দিকে তিনি (মাজেদ) নিজের বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন। তখন আমরা তাকে গ্রেপ্তার করি। এক্ষেত্রে আমাদেরকে তেমন বড় কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি,"
তিনি আরো বলেন, "আমরা এখন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখছি। এরপর আমরা ইউরোপের পুলিশ ও আইনজীবীদের সাথে এ বিষয়ে আলাপ করবো। তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়।"
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিও (এনসিএ) মাজেদের ধরা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, "প্রতিবেদনের মাধ্যমে তার মানব পাচারের বিষয়টি প্রকাশ করার জন্য আমরা বিবিসির কাছে কৃতজ্ঞ।"
এতে আরো বলা হয়েছে, "যুক্তরাজ্যে যারা মানব পাচার করছেন তারা যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, আইনের আওতায় এনে এসব চক্রকে নির্মূল করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।"
২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে স্করপিয়ন ও তার দলের সদস্যরা ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে মানবপাচার বাণিজ্যের বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে মনে করা হয়।
দুই বছরের আন্তর্জাতিক পুলিশ অভিযানের ফলে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের আদালতে দলটির ২৬ জন সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
কিন্তু স্করপিয়ন নিজেই গ্রেপ্তার এড়িয়ে পালিয়ে যান।
তার অনুপস্থিতিতে তাকে বেলজিয়ামের একটি আদালতে বিচার করা হয়েছিল এবং ১২১টি গণ-পাচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি ৯ লাখ ৬৮ হাজার পাউন্ড (৮ লাখ ৩৪ হাজার ডলার) জরিমানা করা হয়েছিল।