মানব পাচারে অভিযুক্ত হেলি চাকমা গ্রেপ্তার, আদালতে পাঁচ ভিকটিমের জবানবন্দি
"সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেলি চাকমার সাথে যোগাযোগ হয়। চ্যাটিংয়ে চীনে উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ দেয়ার কথা বলে আমাদের ঢাকা যেতে বলেন। যাওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকাও বিকাশ করেন। ঢাকা যাওয়ার পর ফোন কেড়ে নেয় এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কৌশলে আমার বড় বোনকে বিষয়টি জানালে পুলিশের সহায়তায় আমাদের উদ্ধার করা হয়।"
রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির আমলী আদালতে জবানবন্দি দেয়া শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান নিরাশা চাকমা। ঢাকার উত্তরার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোরী পাঁচ ভিকটিমের একজন নিরাশা। মূলত নিরাশা এবং ভ্যালেন্টিনা চাকমার নিখোঁজের সূত্রধরে পাচারচক্রের সন্ধান পায় খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ।
এদিকে রাতে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে নারী পাচারচক্রের মূল সদস্য সুমি চাকমা ওরফে হেলিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে আটক হওয়া চীনা নাগরিক জিসাও সুহুই (৩৪)কে খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে জেল হাজাতে প্রেরণ করে। আদালতে পাঁচজন ভিকটিম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা জানান, হেলি চাকমা ও জিসাও সুহুই নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে উত্তরার ওই ফ্লাটটিতে ভাড়া থাকতেন।
পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিউল আজম জানান, ভিকটিম নিরাশা চাকমা ও ভ্যালেন্টিনা চাকমাকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। অপর তিনজন আসিফ চাকমা, সাঙ্গাময় তঞ্চঙ্গ্যা ও মুন্নি তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলায়। তাদের রাঙ্গামাটির ডিবির মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় নিরাশা চাকমার মা শুভা দেবী চাকমা ও ভ্যালেন্টিনা চাকমার মা মালাবী চাকমা পানছড়ি থানায় দুটি পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ঘটনা তদন্তে গঠিত টিমের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: জসীম উদ্দিন বলেন, "একটি সংঘবদ্ধচক্র এই মানব পাচারের সাথে জড়িত। নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ের সহজ-সরল মানুষগুলোকে চীনে পাচারের সাথে জড়িত এরা। আমরা ইতোমধ্যে মূল দুই হোতা জিসাও ও হেলিকে গ্রেফতার করেছি। তাদের সাথে আর কারা কারা আছে- আমরা খতিয়ে দেখছি। আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে।"
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, "আমরা এই ঘটনার গোঁড়া পর্যন্ত যাব। মানবপাচারের সাথে জড়িতদের তদন্ত করে বেরিয়ে আনবো।"