লালদিয়ার চরে বন্দরের উচ্ছেদ: নিজ উদ্যোগে সরে গেছে ২৩০০ পরিবার
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১ মার্চ) সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগেই সেখানে বসবাসরত ২৩০০ পরিবারের প্রায় ২৪ হাজার বাসিন্দা নিজেদের বসতবাড়ী গুটিয়ে নিরাপদে সরে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী লালদিয়ার চরে সোমবার সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৬ ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেয় ৫৫৭ জন পুলিশ সদস্য, ১০০ জন র্যাব, সদস্য এবং প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক।
তিনি আরো বলেন, লালদিয়ার চরে বসবাসরত বাসিন্দারা বন্দরের উচ্ছেদ অভিযানের আগেই তাদের নিজেদের বসতঘর সরিয়ে নিয়েছেন। সেজন্য বুলডোজার বা অন্যান্য যন্ত্রের ব্যবহার করতে হয়নি। এখন ওই এলাকার ৫২ একর জায়গায় চলছে কাটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ। দু'য়েক দিনের মধ্যেই বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ হবে। তবে আপাতত লালদিয়ার চরে অবস্থিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মসজিদ ভাঙ্গা হচ্ছেনা।
এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের শুরুতে সোমবার সকালে বোট ক্লাব এলাকায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারমান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। তিনি বলেন, লালদিয়ার চরে বসবাসরত বাসিন্দারা যাতে স্বেচ্ছায় চলে যান সে বিষয়ে আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। তারা সেই কথা রেখেছেন। তাই উচ্ছেদ অভিযানে বল প্রয়োজনের প্রয়োজন নেই। কেউ যাতে এই এলাকা দখল করতে না পারে সেজন্য কাটা তারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। আনসার সদস্যরা পাহারা দেবে।
তিনি আরো বলেন, এ জায়গার মালিক বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২৬ একর উচ্ছেদ করেছি। ৫২ একর জায়গা আজ পুনরুদ্ধার হচ্ছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদ হলে সরকার তৃণমূলদের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকে । তাদের সহায়তা করার জন্য আমরা তালিকা পাঠিয়েছি।
প্রসঙ্গত, পতেঙ্গায় বিমানবন্দর ঘাঁটি সম্প্রসারণের জন্য ১৯৭২ সালে কয়েক হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে সরিয়ে লালদিয়ার চরে পুনর্বাসন করে তৎকালীন সরকার। এর সময় ৪০০ পরিবারকে ১২৪ একর জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়। জায়গাটি ১৯৩৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের নামে অধিগ্রহন করা বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কর্ণফুলী নদী রক্ষায় নির্দেশনা চেয়ে দশ বছর আগে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) রিট করে। লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা প্রসঙ্গে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রিট পিটিশনের আদেশ দেন। ওই আদেশে ২ মাসের মধ্যে লালদিয়া চরস্থ সকল অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ৯ মার্চ হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ১ মার্চ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে সেখানে বসবাসরত বাসিন্দারা তাদের উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের দাবীতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলো।