শতাধিক প্রজাতির গাছ কেটে পার্ক আধুনিকায়ন করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন
বাহারাইনের নারকেল, সুইজারল্যান্ডের ডালচিনি, জামরুল, উলট কম্বল, ব্রাজেলিয়ান কপিসহ শতাধিক প্রজাতির গাছ নির্মুল করে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে চট্টগ্রামে কাজির দেউড়ি শিশু পার্ক।
আর এ আধুনিকায়নের নামে কাটা হচ্ছে শতাধিক প্রজাতির প্রায় ৫ হাজার গাছ। বিভিন্ন প্রজাতির এসব গাছ কাটার জন্য বন বিভাগ থেকেও নেয়া হয়নি কোন অনুমতি।
কাজীর দেউড়িতে যে স্থানে শিশুপার্কটি রয়েছে, সেই স্থানটি উন্মুক্ত ও সবুজায়ন রাখার প্রস্তাবনা রয়েছে নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিদের। নগরীর এ একখন্ড সবুজ পরিবেশের ভারসাম্য বহন করে নগরীর হৃদপিন্ড সার্কিট হাউজ এলাকার।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে ছোট ছোট পাখিদের আবাসও।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পার্কের প্রধান ফটক নির্মাণের জন্য মাটি খোঁড়া হয়েছে। মাটির নিচ থেকে তোলা হচ্ছে পিলার। প্রধান গেইট দিয়ে পূর্ব দিকে গেলে চোখে পড়বে স্তুপ করে রাখা বিভিন্ন প্রজাতির কাটা গাছ। পার্কের পূর্ব দিকেই রয়েছে অধিকাংশ গাছ। এখানে বর্তমানে রয়েছে ক্যাফে চিটাগাং নামের একটি মিনি রেস্টুরেন্ট। এ রেস্টুরেন্টকে ঘিরে চারদিকে গড়ে উঠেছে সবুজায়ন, যা এ এলাকাটিকে দিয়েছে অনন্য সৌন্দর্য্য।
পার্কে রয়েছে আম, জাম, কাঠল, আমলকি, পেয়ারা, বট, এরাবিয়ান খেজুর, কামরাঙ্গা, সফেদা, আগর, জলপাই, আমড়া, সুইজারল্যান্ডের মিষ্টি জলপাই, অস্ট্রেলিয়ান গোলাপ, সুইজারল্যান্ডের ডালচিনি, বাহরাইনের নারকেল, আপেল, মাল্টা, পানি ফল, জামরুল, বাসক, তেতুল, তুলসী, মালয়েশিয়ান পামসহ শতাধিক প্রজাতির প্রায় পাঁচ হাজার গাছ।
ক্যাফে চিটাগাং এর সত্ত্বাধিকারী হাজী মাহফুজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “১৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে চারা এনে এখানে বানায়ন করেছি। এখানে রয়েছে প্রায় শতাধিক প্রজাতির ফুল, ফল ও সৌন্দর্যবর্ধক, ঔষধিসহ প্রায় ৫ হাজার গাছ। এখানে পার্কের নতুন রাইড সংযোজনের নামে কাটা হবে এসব গাছ।”
বনজ দ্রব্য পরিবহন বিধিমালা ২০১৪ অনুযায়ী যে কোন সরকারি, বেসরকারি এবং ব্যাক্তি পর্যায়েও গাছ কাটতে হলেও বন থেকে নিতে হয় অনুমতি। কিন্তু এ বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই কাটা হচ্ছে এসব গাছ।
গাছ কাটার জন্য কোন ধরেণর অনুমতি নেয়া হয়নি উল্লেখ করে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বখতেয়ার নুর সিদ্দিকী বলেন, গাছ কেটে শিশু পার্ক আধুনিকায়ন করা হলেও আমাদের কাছ থেকে কোন ধরণের অনুমতি কেউ নেয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অনুমতি ছাড়া গাছ কাটার কোন সুযোগ নেই।
১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে প্রতিমাসে ৭৫ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশু পার্কটি ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৫ বছরের জন্য লিজ দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। গত ২৭ নভেম্বর শেষ হয় এ চুক্তির মেয়াদও। নতুন করে ১৫ বছরের জন্য আবার প্রতিষ্ঠানটিকে পার্ক লিজ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট অফিসার এখলাছ উদ্দিন আহমেদ জানান, এখন ১৫ বছর মেয়াদে আগের বরাদ্দ গ্রহীতা ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেসের লাইসেন্স নবায়ন করেছে। এখন প্রতিমাসে তারা সিটি করপোরেশনকে দেড় লাখ টাকা করে দেবে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর টাকার হার নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে পার্ক ছাড়া অন্যকিছু করতে দেওয়ার অনুমতি নেই বলেও জানান তিনি।
ভায়া মিডিয়ার কর্মকর্তা ও পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুরের রহমান বলেন, “আমি পার্কের চারপাশে গাছ লাগিয়ে নিজে সবুজায়ন করেছি। আর আমার জায়গাটি উন্মুক্ত রয়েছে। পুরাতন রাইডগুলো সরিয়ে নতুন রাইড বসানো হবে। এজন্য কোন গাছ কাটা হবে না।”
তিনি আরো জানান, একটি আধুনিক এবং মানসম্মত শিশু পার্ক করবো আমরা। এজন্য আধুনিক কিছু রাইড, হরর হাউস, হলোগ্রাম প্রজেকশান, নাইন-ডি সিনেমা ও অ্যাকুরিয়াম রেস্টুরেন্ট চালু করা হবে।
চট্টগ্রাম শিশু পার্কের আধুনিকায়নে ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ প্রকল্পের আওতায় নগরের কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত চট্টগ্রাম শিশু পার্কে ৯-ডি স্যামুলেটরসহ বিভিন্ন রাইড স্থাপন করা হবে। এছাড়া একটি আলাদা ফুডকোর্ট ও একটি অ্যাকুরিয়াম রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হবে। একটি চায়না কারিগরি সহায়তা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এ শিশু পার্ক আধুনিকায়ন করা হবে।
পার্ক আধুনিকায়নের কাজ উদ্বোধনকালে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, এই নগরে মানসম্মত পার্ক নেই বললে চলে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রতিটি ওয়ার্ডে পার্ক, উদ্যোন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে খালি ও পরিত্যক্ত জায়গা পাওয়া যাবে সেখানেই পার্ক নির্মাণ করবে চসিক।