শপিংমল খোলার প্রথম দিনে নেই ক্রেতাদের ভিড়
কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় তরঙ্গের আঘাত ঠেকাতে জারি করা সরকারি লকডাউনে টানা ১১ দিন বন্ধ থাকার পর আজ খুলেছে দেশের মার্কেট ও শপিংমলগুলো। কিন্তু প্রথম দিনে বিক্রেতাদের হতাশই হতে হয়েছে, কারণ মার্কেটগুলোতে ছিলনা ক্রেতার ভিড়।
দোকানদাররা জানান, লকডাউনের আগে আগে বহু মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। এছাড়াও লকডাউনের ফলে রাস্তায় যানবাহন কম থাকায়ও অনেকেই মার্কেটে আসতে পারছেন না। সেই সাথে, মাসের শেষ হওয়ায় অনেকের হাতেই কেনাকাটা করার মত টাকা নেই।
চলমান পরিস্থিতির ফলে তাদের ব্যবসায়ে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে তারা চিন্তিত।
চাঁদনি চক দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নিয়ামুদ্দিন দাবি করেন, সরকার নির্ধারিত ৯টা-৫ টা সময়ের বদলে সারা দিন দোকান খোলা রাখা উচিত। তিনি মনে করেন, সারাদিন দোকান খোলা থাকলে ক্রেতা সমাগমও হবে বেশি।
চকবাজারের জাহিদ ফেব্রিকস এর মালিক আরিফুল ইসলাম বিকেলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমি সকাল থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি করেছি। অন্যান্য বছরে দুপুরের মধ্যেই এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেচাকিনি হয়।"
নিউমার্কেটের আরেক দোকানি আনিসুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, তিনি সকাল থেকে একজন ক্রেতাও পাননি।
আনিসুর বলেন, "অন্যান্য সময় ঈদের আগে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকতো, কিন্তু এই বছরের এত লোকসান কিভাবে সামাল দিবো তা নিয়ে আমি চিন্তিত।"
একজন ক্রেতা জানালেন তিনি বহুদিন পর কেনাকাটা করতে এসেছেন, "এখন মার্কেটে আসা বিপজ্জনক। আমি কাপড় খুঁজছি কেনার জন্য, কিন্তু অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে।"
বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে।
সকাল ৯ টার দিকে বহদ্দারহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার মানুষ কাজে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। রিকশা, মোটরবাইক বা সিএনজি অটোরিকশা এলেই সবাই তাড়াহুড়া করে সেটিতে উঠতে চেষ্টা করছেন। গার্মেন্টসহ নানা কারখানায় কর্মরত মানুষেরা তাদের প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে করে কাজে যেতে পারলেও, বাকিদের যানবাহন পেতে যথেষ্ট ভোগান্তি হয়।
নিউমার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী মোহাম্মদ তাহের জানালেন, তিনি এক ঘন্টা যাবত গাড়ি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। রিকশাওয়ালা ভাড়া দাবি করছে ২০০ টাকা, অথচ তার দৈনিক আয়ই ৫০০ টাকা।
রিকশাচালক জসিম মিয়া বললেন, 'এখন রাস্তায় যানবাহন অনেক কম, তাই আমি ভাড়া সামান্য বেশি চাইছি।'
বেলা ১১ টায় শহরের চকবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুলজার টাওয়ার, মতি শপিং কমপ্লেক্স, কেয়ারি এলসিয়ামসহ বেশিরভাগ মার্কেট ও শপিংমলই খোলা রয়েছে। তবে সব কর্মচারীই দোকানে আসেননি বলে জানা যায়।
শহরের জিআইএস জংশনের সেন্ট্রাল প্লাজা শপিংমলের প্রায় সব দোকানই আজ খোলা পাওয়া যায়। কাজির দেউড়ির ভিআইপি টাওয়ার বেলা ১২ টায় খোলা হলেও সেখানে ক্রেতা সমাগম ছিল খুবই কম।
মতি কমপ্লেক্সের 'লিজা শাড়ি বিতান' দোকানের মালিক জাফর আহমেদ বলেন, 'মার্কেট-শপিংমল খুলে দিলেও গণপরিবহন এখনো বন্ধ, তাই কর্মচারীরা কাজে আসতে পারছে না। ক্রেতারাও মার্কেটে আসতে পারছে না। আবার আমাদের বিকাল ৫ টার মধ্যে দোকান বন্ধ করতে হবে। আমি বুঝতে পারছি না তাহলে আমরা ব্যবসা করবো কখন!'
তবে লকডাউন সত্ত্বেও নগরীর কিছু জায়গায় যানজট এর দৃশ্যও দেখা গিয়েছে।
আগারগাও, ফার্মগেট, পান্থপথ, কারওয়ান বাজারের রাস্তাগুলোও যানবাহনে পরিপূর্ণ ছিল। বিজয় সরণী থেকে আগারগাও পর্যন্ত গাড়ির লম্বা সারি দেখা যায়। ফার্মগেট থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় পর্যন্তও একই চিত্র দেখা গেছে।
সপ্তাহের প্রথম দিনেই মার্কেট খুলে দেয়ার পর রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন বহু মানুষ। কিন্তু গণপরিবহনের স্বল্পতা থাকায় কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, গেল মঙ্গলবার সরকার লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এই লকডাউনে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক এবং শেয়ারবাজার সীমিতি সময়ের জন্য খোলা থাকবে।
এছাড়াও লকডাউন চলাকালীন সকল ধরনের গণপরিবহণও বন্ধ থাকবে।
তবে বিশেষায়িত বিমান ফ্লাইটগুলো চলবে বলে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখা যাবে কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও।
জরুরি যেকোনো সেবার ক্ষেত্রে এসব নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবেনা।