শিশুদের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
শিশুদের জন্য দেশজুড়ে চালানো সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগামী ৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছয় দিনব্যাপী কোভিড টিকাদান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছে। এ ছয় দিনে ৬০ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।
ফেব্রুয়ারিতে গণটিকাদান শুরু হওয়ার পর ছয় মাসে বাংলাদেশ মাত্র ২.৫ শতাংশ জনসংখ্যাকে টিকা দিতে পেরেছে। তাই কেন্দ্রগুলোতে ঠিকমতো টিকা ব্যবস্থাপনা করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ইপিআইয়ের আওতায় গণটিকাদানের পূর্বঅভিজ্ঞতা আছে তাদের। অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, ছয় দিনের মধ্যে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ড. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, উপজেলা পর্যায়ের সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইস-লাইনড রেফ্রিজারেটর রয়েছে। ইউনিয়নগুলোতে টিকা দেওয়ার দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টিকা কোল্ড বক্সে করে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'সব কাজই ঠিকমতো হবে।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওয়ার্ড পর্যায়ের ১৫ হাজার ২৮৭টি টিকা কেন্দ্রে প্রতিদিন ২৫ বছরের বেশি বয়সি ১০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। শহরাঞ্চলের টিকা কেন্দ্রে মডার্না ও গ্রামাঞ্চলে চীনের সিনোফার্ম টিকা দেওয়া হবে। সিনোফার্ম টিকা ফ্রিজের সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়।
দেশে এখন ৮১.৬৬ লাখ মডার্না ও সিনোফার্ম ভ্যাকসিন রয়েছে। এর পাশাপাশি সামনে চীনা টিকার আরও বেশ কিছু চালান আসবে ঢাকায়।
ক্যাম্পেইন চলাকালীন উপজেলা পর্যায়ের টিকা কেন্দ্রগুলোতে শুধু দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ছয় দিনের এই ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে সংক্রমণমুক্ত রাখা। কারণ কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী ও অন্যান্য শহরের হাসপাতালগুলোতে দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে আসা করোনা রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না।
সরকার প্রথমবারের মতো এনজিও ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে মিলে টিকাদান কর্মসূচি চালাতে যাচ্ছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডে টিকাদান কেন্দ্র নির্ধারণ করবেন।
এই কর্মসূচিতে মানুষ প্রথমবারের মতো 'অন-স্পট' রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে।
ড. রোবেদ আমিন বলেন, 'ইউনিয়ন পর্যায়ে যাদের ইন্টারনেট সুবিধা আছে, তারা অনলাইনে নিবন্ধন করবেন। তা না পারলে টিকা কেন্দ্রে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এলে নিবন্ধন করে টিকা দেওয়া হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে বিকল্প হিসেবে জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট দিয়েও টিকার নিবন্ধন করা যাবে।'
ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ক্যাম্পেইনের জন্য এরইমধ্যে উপজেলায় টিকা পৌঁছানো শুরু হয়েছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'ইপিআইয়ের হেলথ অ্যাসিসটেন্টরা ভ্যাকসিন দেবেন। সারা দেশে ইপিআইয়ের কর্মীরা আগে থেকেই শিশুদের বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন দিয়ে আসছেন। তাই জনবল সংকট হবে না।'
ডা. আলমগীর জানান, ১২ আগস্ট প্রথম ক্যাম্পেইন শেষ করার পর প্রতি মাসে এ ধরনের ক্যাম্পেইন করার কথা ভাবছেন তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পেইনের টিকাদান কার্যক্রম তদারক করবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান পরামর্শ দিয়েছেন, টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়স্কদের যেন প্রাধান্য দেওয়া হয়। ক্যাম্পেইনে তরুণদের ভিড়ে বয়স্করা যাতে টিকা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশের দিনে ২০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার সক্ষমতা আছে। তাই জনবল সংকট হবে না। মূল সমস্যা হচ্ছে, কাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, তা নিয়ে। কারণ বয়স্কদের মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। মৃত্যু কমাতে চাইলে আগে ৫৫ বছরের বেশি বয়সিদের টিকা দিয়ে তারপর বাকিদের টিকা দিতে হবে।'
টিকা নেওয়ার সর্বনিম্ন বয়স এখন ২৫
সরকার বৃহস্পতিবার চতুর্থবারের মতো কোভিড-১৯-এর টিকার নিবন্ধনের জন্য বয়সসীমা কমিয়ে ২৫ করেছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। তখন টিকা নেওয়ার বয়সসীমা ছিল ৫৫ বছর। কিন্তু চার দফায় টিকার নিবন্ধনের বয়স কমিয়ে এখন ২৫ বছর করা হলো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের জন্যও টিকা নেওয়ার বয়স পর্যায়ক্রমে ১৮-তে নামিয়ে আনা হবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশে বর্তমানে ৮৯.৪৬ লাখ ডোজ মডার্না ভ্যাকসিন, ৫০ হাজার ডোজ ফাইজার, ৩২.২১ লাখ ডোজ সিনোফার্ম এবং ২.৪৫ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনাকা ভ্যাকসিন রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি জানিয়েছেন, আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মোট ২১ কোটি ডোজ কোভিড টিকা পাবে। যা জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার জন্য যথেষ্ট।
এখন পর্যন্ত দেশে ৮২.৭৩ লক্ষ মানুষ কোভিড টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৪৩.২২ লক্ষ মানুষ।