শিশু তুহিন হত্যা: বাবা ও দুই চাচা ফের রিমান্ডে
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে পাঁচ বছরের শিশু তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা ও দুই চাচার ফের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
সোমবার সুনামগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক শ্যাম কান্ত সিনহা তুহিনের বাবা আবদুল বাছিরকে পাঁচ দিন ও দুই চাচা আবদুল মোছাব্বির ও জমশেদ আলীকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আবদুল বাছির এবং চাচা আবদুল মোছাব্বির ও জমশেদ আলীকে আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
এর আগে গত শুক্রবার বাছিরসহ তুহিনের দুই চাচাকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
এদিকে মঙ্গলবার নিহতের আরেক চাচা নাসির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এ ঘটনায় প্রথমে সন্দেহভাজন হিসেবে তুহিনের বাবা, চাচা, চাচি, চাচাতো বোন ও চাচাতো ভাইকে আটক করে পুলিশ। পরে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে চাচি ও চাচাতো বোনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর রাতে দিরাইয়ে পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা তার লাশ রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।
শিশু তুহিনের শরীরজুড়ে ছিল ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। পেটে দুটি ছুরি ঢোকানো অবস্থায় ছিল, দুটি কান কাটা ছিল। এমনকি গোপনাঙ্গও কেটে ফেলা হয়েছিল।
হত্যার ঘটনায় ১৫ অক্টোবর ভোরে তুহিনের মা বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় তুহিনের বাবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরে, ১৫ অক্টোবর তুহিন হত্যার ঘটনায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার বাবা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন বলে জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
পুলিশ জানায়, আদালতে নিজেদের দায় স্বীকার করে তুহিনের চাচা আবদুল মুছাব্বির ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ারও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
তুহিন হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা গেছে দাবি করলেও কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘ধারণা করছি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এ বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে আমরা তদন্ত চালাচ্ছি। আশা করছি দ্রুত সবকিছু পেয়ে যাব।’
অবশ্য ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে তুহিনের মা মনিরা বেগম বলেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না আমার স্বামী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তুহিন সব সময় তার বাবার পাশেই ঘুমাত। তাকে কোনো দিন ছেলেকে আঘাত করতে দেখিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই তুহিন হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করে ফাঁসি কার্যকর করা হোক।’