শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বিএসআরএমের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে বিএসআরএমের রড কারখানায় দুর্ঘটনায় তিন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে এক নিহতের পরিবার। গত শনিবার কারখানায় দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া আবুল কাশেমের পরিবার জোরারগঞ্জ থানায় বিএসআরএম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ফ্লোর ইনচার্জকে অভিযুক্ত করে মামলা নিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে এ ঘটনায় বিএসআরএম কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিঠি গঠন করলেও তাতে রাখেনি ফায়ার সার্ভিস কিংবা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কোনো প্রতিনিধি।
নিহত আবুল কাশেমের শ্যালক আবদুর রহিম বলেন, 'কারখানায় দুর্ঘটনার ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় বিএসআরএম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।'
জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বিএসআরএমের রডের কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চুল্লি থেকে তরল তপ্ত লোহা উপচে পড়ে নিচে কর্মরত শ্রমিকদের ওপর। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হন। দুজন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহত আবুল কাশেমের ভগ্নিপতি একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। আমরা তা খতিয়ে দেখে কারখানার ফ্লোর ইনচার্জকে অভিযুক্ত করে মামলা নিয়েছি।
বিএসআরএমের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার (পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন) ওমর সোহাইব বলেন, 'অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতি ও দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসআরএম কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে এবং হতাহতদের প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।'
জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বিএসআরএমের একটি রড কারখানায় একটি চুল্লী থেকে গলিত সীসায় দগ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হন। এছাড়াও আরও দুজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার বিস্তারিত জানাতে পারেনি সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
নিহতরা হলেন- নজরুল ইসলাম (২৪), গিয়াস উদ্দিন (২৪) ও আবুল কাশেম (৬২)। এদের মধ্যে আবুল কাশেম শনিবার বিকেলে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। গুরুতর আহত দুই জন হলেন- নুর হোসেন (৩০) ও মহিউদ্দিন (২৮)। শ্বাসনালী বেশি পুড়ে যাওয়ায় তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকল কলেজ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে শনিবার গিয়াস উদ্দিন ও নজরুল ইসলামের শ্বাসনালী বেশি পুড়ে যাওয়ার কারণে তাদেরও চমেক থেকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে কুমিল্লায় এ দুজন মারা যান।
বিএসআরএমে শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ম্যানেজিং পার্টনার রনজিত বড়ুয়া বলেন, 'নিহত আবুল কাশেম আমাদের সরবরাহকৃত শ্রমিক ছিলেন। এই দুর্ঘটনা বিএসআরএম কর্তৃপক্ষের কারিগরি ত্রুটির কারণে ঘটতে পারে। শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। তারা নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।'
২৪ ঘণ্টায়ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারেনি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর
কোনো কলকারখানায় দুর্ঘটনা হলেই নিয়ম অনুযায়ী দ্রুত পরিদর্শন করে সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। কিন্তু বিএসআরএমের রড উৎপাদনকারী কারখানায় দুর্ঘটনার ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠাটির চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক মো. আল আমিন বলেন, 'দুর্ঘটনার বিষয়টি কারখানা থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। এরপর আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং লোকবল সংকটের কারণে দ্রুত পরিদর্শন করা যায়নি।'
ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক শুভঙ্কর দত্ত বলেন, 'বিএসআরএমের একটি ফ্যাক্টরিতে দুর্ঘটনায় তিন শ্রমিকের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। আমরা সরেজিমন পরিদর্শন করে মহপরিদর্শকের কাছে রিপোর্ট পাঠাব। রোববার সাপ্তাহিক সভা থাকার কারণে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়া যায়নি।'
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিরসরাইয়ের স্টেশন অফিসার মো. তানভীর বলেন, 'দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। কিন্তু আমরা যাওয়া পর কারখানা কর্তৃপক্ষ সব কিছু নিয়ন্ত্রণে এনেছে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি যারা দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে, তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে কী কারণে এ দুর্ঘটনা হয়েছে, তার কিছুই জানায়নি বিএসআরএম কর্তৃপক্ষ।'