সবুজায়ন উদ্যোগের জন্য আমেরিকান পদক পেল বিজিএমইএ
পোশাক শিল্প খাতে সবুজায়ন উদ্যোগ নেওয়ার ফলে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) কর্তৃক '২০২১ ইউএসজিবিসি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড'-এ ভূষিত হয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমএই)।
বৈশ্বিক পোশাক শিল্প জগতে বিজিএমইএ'ই একমাত্র সংগঠন যারা এই পদক অর্জন করল।
গেল শুক্রবার এক গণমাধ্যম বিজ্ঞপ্তিতে ইউএসজিবিসি বিশ্বজুড়ে এই পদক প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে। স্বাস্থ্যসম্মত, ন্যায়সঙ্গত ও স্থিতিস্থাপক ভবন এবং গোষ্ঠী তৈরিতে টেকসই উদ্ভাবন করার পুরস্কার হিসেবে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে এই পদক দেওয়া হয়।
বিশ্বের সর্বপ্রথম প্লাটিনাম পর্যায়ের ডেনিম কারখানা 'এনভয় টেক্সটাইলস'-এর মালিক কুতুবুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই পদকপ্রাপ্তি নিঃসন্দেহে বিজিএমইএ-এর জন্য একটি বড় পরিচিতি।
তিনি আরও জানান, বিজিএমইএ নিজেও সবুজায়ন উদ্যোগের জন্য বিভিন্ন পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃত করে থাকে। সবুজায়ন উদ্যোগকে সহযোগিতা করতে প্রতি অর্থবছরে আলাদা নীতিনির্ধারণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিজিএমইএ।
টেকসই, স্বাস্থ্যসম্মত, ন্যায্য ও স্থিতিস্থাপক ভবন, শহর, জনগোষ্ঠী নির্মাণে নেতৃত্ব প্রদান ও ভূমিকা রাখার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে এই ইউএসজিবিসি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়।
বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সংগঠন নিজেই তার সদস্য কারখানাগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে সবুজায়নের দিকে আগ্রহী করে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে সবুজ ও টেকসই উৎপাদনের গুরুত্ব প্রচার করতে ওয়ার্কশপ আয়োজন করা।
তিনি আরও যোগ করলেন, 'এছাড়াও বিজিএমইএ নিয়মিত সরকারের সাথে নীতিনির্ধারণী বৈঠক করে থাকে যেন কম খরচে ও কর সুবিধা নিয়েই সবুজ কারখানা স্থাপন করা যায়। আমাদের এই সেবার কারণে বর্তমানে একটি সবুজ কারখানাকে ১০ শতাংশ কর্পোরেট কর দিতে হয়, যেখানে অন্যরা দেয় ১২ শতাংশ।'
মহিউদ্দিন রুবেল জানালেন, বিজিএমইএ-এর সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বেশকিছু স্বল্পব্যয়ী পরিকল্পনা চালু করেছে, যার মধ্যে আছে গ্রিন ট্রান্সফর্মেশন ফান্ড এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ফান্ড। এগুলো মালিকদের সবুজ কারখানা তৈরিতে সাহায্য করে।
"এছাড়াও সবুজ কারখানা নির্মাণজনিত তথ্য ও ডেটা আদান প্রদানের জন্য ইউএসজিবিসির সঙ্গে বিজিএমইএ'র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। প্রযুক্তি, মেশিনারি ও সেরা সুবিধা নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে ইউএসজিবিসির সঙ্গে মিলে বেশকিছু প্রশিক্ষণ ও কর্মশালাও আয়োজন করেছে বিজিএমইএ", বলেন মহিউদ্দিন।
মহিউদ্দিন রুবেল নিজে ইউএসজিবিসি প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তার উপদেষ্টা পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।
পাঁচটি অঞ্চলের ভিত্তিতে, ছয়টি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অঞ্চল ও পাঁচটি আন্তর্জাতিক অঞ্চলে ইউএসজিবিসি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
সবুজ পোশাক কারখানা তৈরির উর্ধ্বগতি
এই মুহূর্তে সবুজ পোশাক শিল্প কারখানার সংখ্যার দিক থেকে সারা বিশ্বে শীর্ষ স্থানে আছে বাংলাদেশ। ইউএসজিবিসি এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে সবুজ কারখানার সংখ্যা ১৪৩টি; যার মধ্যে প্লাটিনাম খ্যাতি পাওয়া রয়েছে ৪০টি। এর পাশাপাশি, আরও ৫০০টি কারখানার সবুজ কারখানায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বিশ্বের শীর্ষ ১০টি পরিবেশবান্ধব গার্মেন্ট কারখানার ৯টিই বাংলাদেশে অবস্থিত। শুধু তাই নয়, বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি প্লাটিনাম কারখানার মধ্যে ৩৯টিই বাংলাদেশি।
২০১২ সালে মে মাসে বাংলাদেশের 'ভিন্টেজ ডেনিম স্টুডিও' বিশ্বের সর্বপ্রথম কারখানা হিসেবে এলইইডি প্লাটিনাম সনদ লাভ করে।
২০১৩ সালের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর থেকে দেশের পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারাও সবুজায়ন উদ্যোগের দিকে ঝুঁকেছেন এবং অনেক বিনিয়োগও করেছেন।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগগুলো বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনছে। 'আমাদের উদ্যোক্তারা সবুজ ভবন নির্মাণে বিনিয়োগ করছে যা আমাদের পণ্য কিনতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করবে,' বলেন তিনি।
মহিউদ্দিন জানালেন, টেকসই উৎপাদন এখন বাস্তব সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ,কারণ অ-টেকসই পণ্য বিক্রি করা এখন বেশ কঠিন। তাই এটা এখন আর কোনো বিকল্প পন্থা নয়, বরং এটি অত্যাবশ্যক। আর সবুজায়নের সনদ পাওয়া টেকসই হওয়ারই একটি অংশ।
তবে তিনি এও বলেন, 'আগে উদ্যোক্তারা মনে করতেন সবুজায়ন উদ্যোগ নিলেই ক্রেতারা তাদের পণ্য বেশি কিনবে। কিন্তু আসলে তা নয়। সবুজায়নের ফলে শুধু কোম্পানির ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পায়।'