সব দাবি মেনে নেবার পরও আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে আন্দোলনের মুখে বুয়েট কতৃর্পক্ষ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাধারণ ছাত্রদের ১০ দফা দাবিই তো মেনে নিয়েছেন ভিসি। তারপরও তারা কেন আন্দোলন করবে, আন্দোলনের কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে?”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের কাউন্সিল-২০১৯ এর উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
তাঁর বক্তৃতায় শিক্ষাঙ্গনে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে অন্যায়কারী যে কারও বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কথা স্পষ্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ রাখতে হবে। কোনো অন্যায়-অবিচার আমরা সহ্য করি নাই, ভবিষ্যতেও করব না। অপরাধী যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
উল্লেখ্য, বুয়েটের তড়িৎ ও যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে গত রোববার রাতে শের-ই-বাংলা হলে একদল ছাত্র পিটিয়ে হত্যা করে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি নিয়ে আলোচনায় বসেন। এর মধ্যে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ১৯ ছাত্রকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কারের দাবি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার খুনীকে খুনী হিসেবেই দেখে। তাই আবরার হত্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দিয়েছেন।
হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের আইজিপি তাঁকে বিষয়টি জানান। এর পরপরই তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন আসামীদের গ্রেপ্তার করতে এবং ভিডিও ফুটেজ থেকে সব তথ্য নিতে।
কিন্তু তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সাধারণ তদন্তে বিঘ্নসৃষ্টির উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের সময় পুলিশকে তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) কেন বাধা দিয়েছিল আমি জানি না।”
‘পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে এখানে সন্দিহান হওয়ার কিছু ছিল না’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী যারা খুনের সঙ্গে যারা জড়িত তারাই এই বাধার সৃষ্টি করেছে কি না সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকক্ষণ তাদের (ফুটেজ সংগ্রহে আসা পুলিশ) আটকে রাখা হয়। আর এর মাধ্যমে আসামীদের পালিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগই করে দেওয়া হয় কিনা- সেটা আন্দোলনকারীরা বলতে পারবে।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মহিলা শ্রমিক লীগের কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর সংগঠনের সভাপতি রওশান জাহান সাথী দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সকল শহীদ এবং বিভিন্ন গণআন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী আওয়ামী লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশ মহিলা শ্রমিক লীগ আত্মপ্রকাশ করে এবং এবার সংগঠনটির দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।