সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে ইউজিসি
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ ঠেকাতে ও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের টিকাদানের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নামের তালিকা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রথমে টিকা দেওয়া হবে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. আলমগীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের টিকাদানের পরই পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিরাপদ হবে।
"যতো শীঘ্রই সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তালিকা পাঠাতে বলেছি আমরা," বলেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সামসাদ মর্তূজা জানান তারা কয়েকদিন আগেই ইউজিসির কাছে তালিকা পাঠিয়েছেন।
"প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যতো দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়া যায় এব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে আশা করছি," বলেন তিনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলো ছাড়া দেশের ৪৬টি পাবলিক ও ১০৬টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাত লাখ শিক্ষার্থী ও ৩০ হাজার শিক্ষক আছেন।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ১.৩ লাখ শিক্ষার্থী হলে থাকে।
এখনো সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নামের তালিকা পায়নি ইউজিসি। ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নামের তালিকা পাঠালেও তা অসম্পূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তালিকা জমা দেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান জানান, তালিকা তৈরি হয়ে গেছে এবং শীঘ্রই ইউজিসির কাছে পাঠানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা পাঠানোর বিলম্ব ও অসম্পূর্ণ তালিকা পাঠানোর কারণে ১৭ মে'র আগে ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মামুন আবদুল কাইয়ুম জানান, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত শুধু শিক্ষকদের তালিকা তৈরি হয়েছে।
"শুধু শিক্ষকদের ভ্যাকসিন দেওয়া হলে তা ফলপ্রসূ হবে না। সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদানের আওতায় আনা উচিৎ," বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরেফিন শারিয়াত জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো তার কাছ থেকে কোনো তথ্য নেয়নি।
"শুধু আমিই নই, আমার হলের বেশ বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করেনি। অন্যান্য হলের চিত্রও অনেকটা এরকমই," বলেন তিনি।
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তালিকায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংযুক্ত করছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া সুরক্ষা অ্যাপে টিকাদানের তারিখ পাওয়া যাবে না।
অধ্যাপক আলমগীর জানিয়েছেন যেসব শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনুরোধ করেছেন তারা।
"তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়া হয়েছে শুধু তাদের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে," বলেন তিনি।
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, ১.৫ লাখের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের নামের তালিকা জমা পড়েছে।
দেশজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২৪ মে থেকে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ১৭ মে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন, পুনরায় হল খোলার আগে সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।