সম্রাট কোথায়?
জুয়া-ক্যাসিনো বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযানে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত নাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগের একাধিক নেতাকে র্যাব গ্রেপ্তার করলেও এখনো গ্রেপ্তার হননি ঢাকা শহরে ক্যাসিনো ব্যবসার ‘নিয়ন্ত্রক’ সম্রাট। তবে সময়ের সাথে সাথে গুঞ্জন বাড়ছে, উচ্চ পর্যায় থেকে ‘সবুজ সংকেত’ আসলে, দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে সম্রাটকে।
১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে ফকিরেরপুল ইয়ং মেনস ক্লাবে অভিযানের পর সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। সে রাতেই হাজারখানেক নেতা-কর্মী নিয়ে কাকরাইলের ভূঁইয়া ম্যানশনে নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থান নেন সম্রাট।
কার্যালয়ে ভেতরে সম্রাটের অবস্থানের মধ্যে ভবনটি ঘিরে এই যুবলীগ নেতাকে ‘পাহারা’ দিয়ে রাখেন আওয়ামী লীগের সহযোগী এই সংগঠনটির শতশত কর্মী। কার্যালয়ের সামনে পাহারারত এসব নেতাকর্মীরা গণমাধ্যমকে তখন বলেছিলেন, ‘গ্রেপ্তার এড়াতেই’ তাদের ‘ভাই’ কার্যালয়ে অবস্থান করছেন।
তবে গত সোমবার সকাল থেকেই কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়া নেতা-কর্মীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সেখানে থাকা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, সম্রাট কার্যালয় থেকে চলে গেছেন।
যুবলীগের এক নেতা বলেন, “ভাই (সম্রাট) দ্রুতই ফিরে আসবেন। তার কিছুই হবে না।”
সম্রাটের কার্যালয়ের উল্টোপাশেই বিপাশা হোটেলের একজন কর্মচারীও জানিয়েছেন, সম্রাটের ব্যক্তিগত এই কার্যালয়ের সামনে আগে যেমন নেতা-কর্মীদের ভিড় লেগে থাকতো, তেমনটা এখন নেই।
নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “মনে হয় ভাই ভিতরে নাই। সেই কারণেই উনার সাথে দেখা করার জন্য বাইরে কেউ অপেক্ষা করতেছে না।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, গত রোববার রাত তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে দু’জন ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে একটি কালো গাড়িতে করে সম্রাট কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার বিলম্বিত করতে ওই রাতেই প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি।
এর আগে, ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযানের দিন সকালে ‘চিকিৎসার’ উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন সম্রাট, তবে পুলিশি বাধায় তা আর পারেননি। সেসময় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
এরপর, সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ, দেশের সকল বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বন্দরগুলোকেও বিষয়টি জানিয়ে রাখে তারা।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, সম্রাটের দেশ ছেড়ে পালানোর কোনও সুযোগ নেই, কারণ তার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সবসময় সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। বিমানবন্দরের আরেক নিরাপত্তা কর্মকর্তার সাথে কথা হলে, তিনিও একই তথ্য দেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, তারাও সম্রাটের ওপর নজর রাখছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছি আমরা। তার গতিবিধি আমরা নজরে রাখছি।”
তবে সম্রাটকে আদৌ গ্রেপ্তার করা হবে কি হবে না সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি র্যাব পরিচালক।
সম্রাটের পাশাপাশি, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক আরিফুল হক বাবু, নির্বাহী সদস্য মোঃ জাকির, দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সভাপতি মহিউদ্দিন মহিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আছেন।
বাহিনীগুলোর একাধিক সূত্র বলছে, যেকোন সময় এই কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
সম্রাট হোক, যেই হোক, অপরাধ করলে আইনের আওতায় নেব: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
চলমান অভিযানের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অপরাধ করলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটকেও গ্রেপ্তার করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শনিবার দুপুরে ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
সম্রাটকে আটক করা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দেখুন,তার সম্বন্ধে আপনারা অনেক কিছুই বলছেন। আমরা যেটা বলছি, সে সম্রাট হোক, যেই হোক, অপরাধ করলে তাকে আমরা আইনের আওতায় নেব।”
তিনি বলেন, “আমি এটা এখনও বলতেছি, সম্রাট বলে কথা নয়, যে আইনের ... তাকে আমরা নেব। আপনারা দেখবেন, খুব শীঘ্রই দেখবেন।”
জুয়া-ক্যাসিনো বন্ধে র্যাব সর্বপ্রথম অভিযান শুরু করলেও পরে পুলিশ ঢাকার কয়েকটি ক্লাবে অভিযান চালায়। এরমধ্যে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে পুলিশ কিছু না পাওয়ার কথা জানালেও দুইদিন পর সেখানে অভিযান চালিয়ে অননুমোদিত মদ ও বিয়ার পাওয়ার কথা জানায় র্যাব। এরপর পুলিশের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে গণমাধ্যমে।
এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “আমি ক্লিয়ার করে দিতে চাই, যেহেতু অভিযানটির শুরু করেছে র্যাব এবং আমরা বলছি ক্যাসিনোর এগুলো র্যাবই করবে।
“অযথা তথ্য ছাড়া কাউকে যেন হ্যারাস না করা হয়, সেজন্যই আমাদের এ পরিকল্পনা।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এজন্য আমরা তথ্যভিত্তিক অভিযান চালাচ্ছি। আপনারাও দেখছেন।”
অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, “অপরাধ ঘটছে বা যারা অপরাধ ঘটাচ্ছে, এমন খবর যখন পাব, তখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এটা কোনো শুদ্ধি অভিযান না। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যা করার প্রয়োজন, তাই আমরা করছি।”