সৃজনশীল শিশুটি যেভাবে খুনি হলো
সুন্দর ছবি আঁকত ছেলেটি। নিজের আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো শোবার ঘর। বন্যপ্রাণীর প্রতিও ছিল অসীম ভালোবাসা। শখ করে বাড়িতে পুষত খরগোশ। তৈরি করত বাহারি রঙের কাগুজে ময়ূরসহ পশু-পাখি । নেশা ছিল ফেলে দেওয়া সিলিংফ্যানের ছোট্ট মটর দিয়ে খেলনা জাহাজ তৈরির।
সুন্দর মনের এই ছেলেটিই কি না এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে খুন করল! কেন সে খুন করল? তার তো খুনি হওয়ার কথা ছিল না। উত্তর খুজতে গিয়ে জানা গেল, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকেই ওই তরুণকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে সে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকার বিমাবন্দর থানার অন্তর্গত কাওলার সিভিল এভিয়েশন কবরস্থানের পাশ থেকে আব্দুর রব পাভেল (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার ১০ দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাভেলের প্রতিবেশি ১৪ বছরের এক শিশুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিমানবন্দর জোনাল টিম। তাকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে খুনের রহস্য।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তরুণ পাভেল শিশুটির প্রতিবেশি ছিল। তারা খিলক্ষেতের খাপারা এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকত। দুটি পরিবারই অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল। তুচ্ছ কারণে বিভিন্ন সময় শিশুটিকে পাভেল শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন পাভেল। শিশুটিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং হেয় করে আনন্দ পেতেন ওই তরুণ। এমনকি শিশুটির বোনকেও বিভিন্ন সময় উত্যক্ত করতেন তিনি। ওর বোনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টাও করতেন পাভেল। এর প্রতিবাদ করলেই শিশুটিকে মারধর করতেন তিনি।
পাভেল এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার কয়েকজন বখাটে বন্ধুও ছিলেন। তারাও শিশুটিকে বিভিন্ন সময় ভয় দেখাতেন। দিনের পর দিন এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে শিশুটি পাভেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, পাভেলের ভয়ে শিশুটি খুবই আতঙ্কগ্রস্ত থাকত। সব সময় তার মনে ভয় কাজ করত। এমনকি এলাকায় পাভেলের কোনো বন্ধুকে দেখলেও শিশুটি ভয়ে পালিয়ে যেত। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে খুনের পরিকল্পনা করে সে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে সে পাভেলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে। ঘটনার দিন সকালে সে পাভেলকে বলে, সিভিল এভিয়েশন কবরস্থানের পাশের নির্জন স্থানে কাকের বাসায় ডিম খুঁজতে গিয়ে স্বর্ণের অলঙ্কারের সন্ধান পেয়েছে। সে ওই স্বর্ণ উদ্ধার করতে পারছে না।
পাভেল লোভে পড়ে সেখানে যেতে চান। তাকে সেখানে নিয়ে যায় শিশুটি। গাছে কাকের বাসায় স্বর্ণালঙ্কার দেখতে তিনি ওপরের দিকে তাকাতেই শিশুটি তার পেটে ছুরিকাঘাত করে। আবার ছুরিকাঘাত করতে চাইলে পাভেল সেটি ধরে ফেলে। এ সময় শিশুটির হাত কেটে যায়। পাভেল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মাটির টব দিয়ে তার মাথায় এবং শরীরে আঘাত করে সেখান থেকে চলে আসে।
ডিবির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শিশুটি ঘটনাস্থলের পাশেই নিজের রক্তমাখা জামা ধুয়ে ফেলে। তাৎক্ষণিকভাবে সে থানায় চলে যায়। তারপর পুলিশকে জানায়, কয়েকজন বন্ধু পাভেলকে কবরস্থানের পাশে মারধর করছে। সে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছে। তার হাত কেটে গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাভেলের মৃতদেহ দেখতে পায়।
শিশুটি পুলিশকে তখন জানায়, পাভেলের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের কাউকেই সে চেনে না। তবে দেখলে চিনতে পারবে। পুলিশ বুঝতেই পারেনি, এই শিশুই পাভেলকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। শিশুটির মিথ্যা বর্ণনা অনুযায়ী হত্যা মামলা হয়। অবশ্য ডিবির হাতে গ্রেপ্তারের পর শিশুটি সব অপকটে শিকার করেছে।
ডিবির বিমানবন্দর জোনাল টিমের এডিসি কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেন, ১৪ বছরের এক শিশুকে গ্রেপ্তারের পর পাভেল হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টিও স্বীকার করেছে ছেলেটি। তাকে কিশোর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের বোন তানজিলা বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ছেলেটির ঝগড়া হয়েছিল। তখন পাভেল ওকে মারধর করেছিল। ওই জেদ থেকেইে আমার ভাইকে সে হত্যা করেছে।