তিন মাসে ঢাকায় ৮ জিকা রোগী: লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা
গত তিন মাসে রাজধানী ঢাকায় আটজনের দেহে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রোগীরা এখন সুস্থ। আক্রান্তরা সবাই ঢাকার বাসিন্দা।
দেশে বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। তার মধ্যেই এডিস মশাবাহিত আরেকটি রোগ, জিকা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায় জানিয়েছে।
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ
আইইডিসিআর জানায়, জিকা ভাইরাস আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
তবে, যেসব ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেয়, তা সাধারণত সংক্রমণের ৩–১২ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং ২–৭ দিন স্থায়ী হয়। অধিকাংশ সময় এ রোগ নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়।
জিকা-আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি মৃদু জ্বর (৯৯° ফারেনহাইট বা ৩৭.২° সেলসিয়াসের বেশি), ত্বকে লালচে দাগ, মাথাব্যথা, চোখ লাল হওয়া, মাংসপেশী বা গিটে ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
সংক্রমণের কারণ
১. এডিস মশার কামড়: প্রধানত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়ায়। এ মশা সাধারণত দিনের বেলা (ভোরে বা সন্ধ্যায়) সক্রিয় থাকে। এটি একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের জন্যও দায়ী।
২. অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক: আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে।
৩. গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ: গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে মায়ের সংক্রমণ হলে গর্ভের সন্তানও সংক্রমিত হতে পারে।
৪. রক্ত ও ল্যাবরেটরি নমুনা: সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ কিংবা নমুনা পরীক্ষার সময় অসাবধানতায় এ রোগ ছড়াতে পারে।
চিকিৎসা
আইইডিসিআর বলছে, জিকা ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। রোগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে, প্রচুর পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর ও ব্যথা হলে প্যারাসিটামল বা চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে।
তবে অবস্থার অবনতি হলে অবশ্যই নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রতিরোধ
১. সচেতনতা: এখনো জিকা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ব্যক্তিগত সচেতনতাই সবচেয়ে কার্যকর।
২. মশার কামড় থেকে সুরক্ষা: জিকা থেকে বাঁচার এটিই সবচেয়ে ভালো উপায়। শরীর-ঢাকা পোশাক পরা, জানালায় নেট লাগানো, মশারি ব্যবহার, অপ্রয়োজনে দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, এবং মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করে মশার কামড় এড়ানো যায়। শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৩. যৌন সম্পর্কের সুরক্ষা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুযায়ী, জিকা আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরে আসার পর যৌন সংসর্গের ক্ষেত্রে ছয় মাস পর্যন্ত নিরাপদ পদ্ধতি (যেমন কন্ডম) ব্যবহার করতে হবে।
৪. গর্ভকালীন সুরক্ষা: গর্ভাবস্থায় জিকা-আক্রান্ত স্থানে ভ্রমণ এড়ানো উচিত। প্রয়োজনে মশার কামড় থেকে সুরক্ষার নিয়ম মেনে চলতে হবে।
৫. ভ্রমণকালীন সুরক্ষা: জিকা আক্রান্ত দেশে অবস্থান ও ফিরে আসার পর ছয় মাস পর্যন্ত মশার কামড় এড়ানো এবং নিরাপদ যৌন সম্পর্ক নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।