সেতু নেই, খাটিয়া নিয়ে খাল পারাপার
খালের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে নেই সেতু। ছোট যে সাঁকোটি আছে, তা এতটাই সরু যে, তা দিয়ে খাটিয়া বহন করা তো দূরের কথা, পাশাপাশি দু’জন মানুষও চলাচল করতে পারে না। আর এ কারণে মরদেহবাহী খাটিয়া নিয়ে খালের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হয় স্থানীয়দের।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম থোয়াংগাকাটা শিয়াপাড়ায় এমন দৃশ্য অনেক দিনের। তবে গত শনিবার পানিতে খাটিয়া মাথায় নেওয়া লোকজনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের নজর কাড়ে স্থানীয়দের দুর্ভোগ।
ওই দিন পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ মুজারোকে।
এর আগে শুক্রবার রাত ৯টায় তার মৃত্যু হয়। পরের দিন জানাজা হয় পারিবারিক কবরস্থানসংলগ্ন মসজিদ মাঠে।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবদুল জব্বার জানান, মোজাফ্ফর আহমদের পরিবারের বেশিরভাগ অংশের বাস শিয়াপাড়ার গর্জনিয়া অংশে। তবে তিনি বাইশারী সীমানার নারিশবুনিয়া অংশে বসতি গেঁড়েছেন। নারিশবুনিয়ায় মৃত্যু হলেও বাপ-দাদা ও স্বজনদের সঙ্গে সমাহিত করতে তাকে গর্জনিয়া নেওয়া হয়।
আবদুল জব্বার জানান, মরদেহ আনতে গিয়ে এলাকার হরিণখাইয়া নামের খাল পার হতে বিপাকে পড়েন নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয়রা। কারণ খালের ওপর স্থানীয়দের উদ্যোগে তৈরি সরু সাঁকো থাকলেও তাতে মৃতদেহ নেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে খালের বুক সমান পানিতে নেমে খাটিয়া মাথায় নিহতের স্বজনরা মরদেহ পার করেন।
তিনি আরও জানান, অনেক যোগাযোগের পর কয়েক মাস আগে রামু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের একজন প্রকৌশলী এ স্থানটি পরিদর্শন করেন। তবে এরপর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
থোয়াংগাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য আবদুল আলিম জানান, পার্বত্য বান্দরবানের সীমান্তবর্তী ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় গ্রামটি খুবই অবহেলিত। দীর্ঘদিন এলাকাবাসী এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এখানে দুই পারের হাজার হাজার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
তিনি জানান, শুষ্ক মৌসুমেও চাষাবাদের কারণে এ খালটি পানিতে ভরপুর থাকে। এ কারণে বর্ষা ও শুষ্ক-উভয় মৌসুমেই মৃতদেহ নেওয়া ও জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে রামু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসউদ রানা সায়েম জানান, হরিণখাইয়া খালের এ স্থানটি তিনি দুই মাস আগে দেখতে যান। কিন্তু ওই স্থানে দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। এ কারণে এখানে বিধি অনুযায়ী সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়।
তিনি জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে খালের দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে ওই স্থানে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
এদিকে খালের পানিতে খাটিয়া বহনের দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষুব্ধ লোকজন অবহেলিত জনপদটির দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কল রিসিভ হয়নি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও তার উত্তর পাওয়া যায়নি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সাংসদ সাইমুম সরোয়ার কমলকেও পাওয়া যায়নি।