সেশন জট কমাতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার মত বিশেষজ্ঞদের
করোনাভাইরাস মহামারির কালে উচ্চ শিক্ষায় সেশন জট কমাতে অনলাইনে ক্লাস চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা, মোবাইল হ্যান্ডসেট ও ল্যাপটপ সরবরাহের এবং একইসঙ্গে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বারানোর পক্ষেও মত দিয়েছেন তারা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংস্থা 'সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি' আয়োজিত বাজেট পরবর্তী এক ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় তারা এ দাবি তোলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ছিলেন প্রধান অতিথি।
ড. আতিউর রহমান বলেন, উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের কতজন শিক্ষার্থীর মোবাইল হ্যান্ডসেট ও ল্যাপটপ লাগবে, সেই হিসেব আমাদের বের করতে হবে। অনলাইনে ক্লাস চালু রাখার জন্য প্রয়োজনে বাজেটে শিক্ষাখাতের বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করারও পরামর্শ দেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি করতে পারে বলেও তিনি অভিমত দেন।
শিক্ষাখাতকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংকগুলোর করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি প্রোগ্রাম বা সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতের আরও বিস্তার ঘটানোর পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীপ্রতি ১০ জিবি ইন্টারনেট বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে।
একইসঙ্গে বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ওপরও তিনি জোর দেন।
অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, অনলাইনে ক্লাস শুরু করার সময় হয়েছে। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশোনার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। একাডেমিক সেশন জট মোকাবেলা করতে হবে। কতজন শিক্ষার্থীকে মোবাইল হ্যান্ডসেট ও ল্যাপটপ দিতে হবে, সেটিও আমাদের বের করতে হবে। একইসঙ্গে, এ জন্য কত টাকা খরচ হবে, করতে হবে সেই হিসেব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই এ ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য আরও বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নতুন নতুন পথ বের করতে হবে। শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দের পরিমাণ অবশ্য অপ্রতুল। গবেষণা খাতে বরাদ্দ না থাকলে কী করে র্যাংকিংয়ে জায়গা পাওয়ার আশা করা সম্ভব? আমাদের গবেষণা কর্মকে আন্তর্জাতিকভাবে সংযুক্ত করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ খরচে স্বচ্ছতা আনতে বরাদ্দের মূল্যায়ন করতে হবে।
কৃষির বিকাশে কৃষিবিষয়ক গবেষণা বড় ভূমিকা পালনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিখাতে গবেষণার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, উচ্চ শিক্ষাকে অবশ্যই উৎসাহিত করতে হবে। তিনি বলেন, এই বাজেটে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের প্রয়োজনীয়তার কোনো প্রতিফলন পড়েনি। মনে হচ্ছে, দেশে মার্চ মাসে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই বাজেটটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রয়োজনে মেগা প্রজেক্টগুলোর গতি কমিয়ে হলেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সাদেকা হালিম বলেন, অনেক শিক্ষার্থীরই মোবাইল হ্যান্ডসেট ও ইন্টারনেট ডাটা কেনার সামর্থ নেই বলে আমরা অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পারছি না।
উচ্চ শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তুলে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনও বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নাম কাটা গেছে অনেক শিশুর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, শিক্ষাখাত যে সমস্যার সম্মুখীন, সেটি নিয়ে বাজেটে যথেষ্ট আলোচনা হয়নি। এ কারণে অর্থমন্ত্রী যতই আশাবাদী হোন, আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারছি না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. তৈয়বুর রহমান জানান, অনলাইনে সাড়ে আট লাখ শিক্ষার্থীর ক্লাসের ব্যবস্থা করতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এ টাকা সরকারের বরাদ্দ দেওয়া উচিত।
একইসঙ্গে ইন্টারনেট খরচ কমানোর দাবি তোলেন তিনি।
এ আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রুমানা হক এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলামও আলোচনা করেন।
অন্যদিকে, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ।