ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যানবাহন চলাচল সীমিত করায় বেড়েছে যানজট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে যান চলাচল সীমিত করায় আশপাশের এলাকাগুলোতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে যানজট বেড়েছে শাহবাগ, দোয়েল চত্বর ও নীলক্ষেত এলাকায়।
এর ফলে এসব এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সাধারণ যাত্রীরা এখন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, বার্ন ইউনিট, শিববাড়ি মোড়, ফুলার রোড, পলাশী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলক্ষেত প্রবেশপথ দিয়ে ক্যাম্পাসে সব ধরনের যানবাহনের প্রবেশ শুক্র ও শনিবারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়া সাধারণ কর্মদিবসে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বহিরাগত যানবাহন চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত যানবাহন এবং অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদমাধ্যম ও সরকারি গাড়িসহ জরুরি যানবাহনগুলোকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় যেসব রাস্তায় যান চলাচল সীমাবদ্ধ করেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগে তারা ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
গতকাল (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরিদর্শনকালে টিবিএস-এর এই প্রতিবেদক দেখতে পান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিম সীমাবদ্ধ এলাকাগুলোতে প্রবেশ করা যানবাহন পরীক্ষা করছে। এতে যানজট লেগে গেছে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. রুবেল টিবিএসকে বলেন, আজ [গতকাল] তিনি ঢাকা মেডিকেল এলাকায় ব্যাপক যানজটে পড়েছেন। ওই এলাকা পার হতে তার প্রায় দুই ঘণ্টা লেগেছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগকৃত যানবাহন পরীক্ষার দলগুলো সুসংগঠিত ছিল না। এছাড়া বেশিরভাগ গাড়ি চেক পোস্ট অতিক্রম করার অনুমতি না পাওয়ায় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
টিবিএসের সঙ্গে আলাপকালে ইলিয়াস হোসেন নামে একজন বাইকচালক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, 'আমার বাসা চানখাঁরপুল এলাকায়, কিন্তু শাহবাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যেতে পারিনি। এখন কাঁটাবন হয়ে যানজট পেরিয়ে যেতে দুই ঘণ্টার বেশি লাগবে। শুক্রবার বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল এলাকায় তিন ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিলাম।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মুসাভি নিহাল উদ্যোগটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো মনে করলেও এটি আরও পরিকল্পিত হওয়া উচিত বলে মত দেন। 'এত দিনের যে একটি রুট তৈরি হয়ে গেছে, সেটি হুট করেই বন্ধ করে দেওয়ার আগে বিকল্প রাস্তা সম্পর্কে নগরবাসীকে জানানো দরকার,' বলেন তিনি।
গতকাল শাহবাগে দায়িত্ব পালনকারী প্রক্টরিয়াল বডির মোবাইল টিমের সদস্য মো. ফারুক হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'বিষয়টি আমরাও সামাল দিতে পারছি না। এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনেকেরই অজানা থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। অধিকাংশ গাড়িই উল্টো ব্যাক করিয়ে দেওয়ার কারণে এবং প্রমাণপত্র চেক করার কারণে পেছনের গাড়ি প্রবেশ করতে পারছে না।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।
একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের আশপাশে অবস্থিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে আসা রোগীদের গত দুই দিনে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
তিনি ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
বহিরাগত যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর আগে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে কার ব্যারিয়ার ও সিকিউরিটি সার্ভেলেন্স বক্স স্থাপন করে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রবেশপথগুলোতে যানবাহন চলাচল সীমিত করার কাজ শুরু হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, সাতটি পয়েন্টের মধ্যে পলাশীর পথটি গতকাল (রোববার) খুলে দেওয়া হয়েছে।
যান চলাচল সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বহিরাগত যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলো তার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছেন।
'ট্রাফিক পুলিশের সাথে বসেই আমরা তাদের পরামর্শ নিয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে একটি বাফার জোন করতে পারি কি না সে বিষয়ে ভাবছি,' বলেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেই তারা আগে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানান প্রক্টর।
তিনি আরও বলেন, শাহবাগ ও নীলক্ষেত ছাড়া যান চলাচল সীমিত করা বাকি সব পয়েন্টই ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত।
ডিএমপির শাহবাগ জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মেহেদি শাকিল টিবিএসকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অফিস সময়ের পরও যানজট বেড়েছে।
তিনি বলেন, এখনও অনেকেই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জানেন না। এছাড়া এই এলাকায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল রয়েছে। ছুটির দিনেও এই এলাকায় গাড়ির লম্বা লাইন দেখা গেছে।
কর্মদিবসে এই এলাকায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।