সৌদি গমনেচ্ছুদের দুর্ভোগ কাটছেই না, আবারও ফ্লাইট বাতিল
অধিকাংশ ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাওয়ায় শনিবার প্রবাসী সৌদি কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরানোর উদ্যোগ শুরুতেই হোঁচট খেল।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আজ ছয়টি বিমানের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল তবে কেবল সন্ধ্যা ৬টার জেদ্দাগামী বিমানটিই যাত্রা করবে"।
ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পেছনের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা রিয়াদে বিমানের অবতরণের অনুমতি পাইনি। এছাড়া কিছু যাত্রীর পিসিআর টেস্ট সম্পন্ন হয়নি, কারো কোভিড পজেটিভ এসেছে, আবার কাউকে কাউকে টিকিট ফেরত দিতে হয়েছে"।
"ফলে যাত্রীর সংখ্যা হ্রাস পায় এবং আমরা ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হই"।
তবে আগামীকালের ফ্লাইটের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই তিনি জানান। পূর্বসূচী অনুযায়ী, আগামীকাল বিমানের সবগুলো ফ্লাইট চলবে।
বৃহস্পতিবার রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, রিয়াদগামী ১৭ এপ্রিলের ফ্লাইট সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাবে। ফলে যাত্রীরা করোনা নেগেটিভ সনদসহ যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। কিন্তু পরে ফ্লাইটটি বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রবাসী কর্মীরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে গতকাল থেকেই ফ্লাইট নিয়ে যাত্রীদের মাঝে উদ্বিগ্নতা কাজ করছিল। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে কয়েকজন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক জড়ো হন। এদের সৌদিতে ফেরার টিকিট করা ছিল।
কিন্তু ১৪ই এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের জন্য তাদের ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
দেশজুড়ে চলমান সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের মধ্যে এয়ারলাইনস অফিস বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে তাদের বাড়ির পথ ধরতে হয়।
আজ শনিবার (১৭ এপ্রিল) থেকে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশ- সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুরে বিশেষ ফ্লাইট চলাচল করবে বলে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসী লোকমান খানকে এয়ারলাইন্স অফিসের পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, "ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রাইভেট কার ভাড়া করে সকালে ঢাকায় এসেছি। তিন মাসের ছুটিতে এসেছিলাম। আমার ফ্লাইটের তারিখ ছিল ১৭ এপ্রিল (আজ)।এদিকে ভিসার মেয়াদ আছে ২২ তারিখ পর্যন্ত।"
"আমরা খবরে দেখেছি ১৭ তারিখ থেকে ফ্লাইট চালু হবে। কিন্তু সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসে এসে কাউকে পেলাম না। পুলিশ আমাদের কাউকে অফিসের ভেতর ঢুকতেও দেয় নি। বরং বাড়ি ফিরে যেতে বলল"।
নোয়াখালী থেকে এসেছিলেন মো. শরিফ। তার ফ্লাইট ছিল ১৪ তারিখে। সেদিন থেকেই লকডাউন শুরু হয়। তিনি বলেন, "৫০০০ টাকায় প্রাইভেট কার ভাড়া করে এসেছি। সকালে তারা (সৌদি এয়ারলাইন্স) কেউই আসেনি। তারা আমাদের কোনো কিছু সম্পর্কে আশ্বস্ত করেন নি"। .
আরেকজন প্রবাসী আবুল বাসার বলেন, "আজকে (শুক্রবার) রাত ২.০০ টায় আমার ফ্লাইট। আমরা সংবাদে দেখেছি বিমান চালু হয়েছে। আমরা করোনা পরীক্ষা করিয়ে এসেছি, বিকালে রিপোর্ট পেয়ে যাবো। কিন্তু এখানে এসে এয়ারলাইন্সের কোনো লোক পেলাম না"।
এ বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের ঢাকা অফিসের ম্যানেজার (বিক্রয়) ওমর খৈয়াম গতকাল বলেন, "বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত বারোটার পরে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নোটিশ প্রকাশিত হয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরবে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তবে আমাদের এখনও প্রত্যুত্তরে কিছু জানানো হয় নি"।
"এর আগে, বাংলাদেশ সরকার সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর আমরা আমাদের সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেই। তবে এই মুহূর্তে বিমান চলাচল পুনরায় চালু করতে হলে বিমানের কর্মী বা ক্রুদের সহজলভ্যতার মত একাধিক বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এর পাশাপাশি ফ্লাইটগুলো বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হবে কি না তাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে কেননা ফিরতি ফ্লাইটে সরকার যাত্রীদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন", যোগ করেন তিনি।
খৈয়াম জানান, "আমরা যদি ফ্লাইট পরিচালনা না করি, তবে আমরা টিকিটের মূল্য ফেরতের বিষয়টি বিবেচনায় রাখব করতে পারি, যাতে যাত্রীরা অন্যান্য এয়ারলাইন্স বেছে নিতে পারে।"
তিনি জানান, লকডাউনের কারণে গতকাল তাদের কর্মীরা অফিসে উপস্থিত ছিলেন না।
সপ্তাহব্যাপী চলা লকডাউনের সময়টাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশের প্রায় ২১ হাজার শ্রমিকের ফিরে যাবার কথা ছিল।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরে গমনেচ্ছু আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের গমনের জন্য আজ থেকে যে বিশেষ ফ্লাইট চালু্র কথা রয়েছে তার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ বাংলাদেশি অন্যান্য এয়ারলাইন্স এবং সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের ন্যাশনাল ক্যারিয়ারসহ অন্যান্য ক্যারিয়ার বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৫টি দেশে গমনেচ্ছু প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে যাদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স রয়েছে, তাদেরকে বিদেশ গমনে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ভিজিট ভিসা আছে, কিন্তু বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স নেই- তারা বিদেশ গমনে অগ্রাধিকার পাবেন না। ভিজিট ভিসা নিয়ে যেসকল বাংলাদেশি কর্মের উদ্দেশ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাবেন, তারা বিএমইটি'র ছাড়পত্র নিয়ে যেতে পারবেন।
বিগত তিন দিন ধরে যেসকল যাত্রী টিকেট কেনা সত্ত্বেও লকডাউনের কারণে বিদেশ গমন করতে পারেননি, তাদেরকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বা সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের ন্যাশনাল ক্যারিয়ারের অতিরিক্ত বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে বিদেশে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করা হবে। যেসব যাত্রী ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম হতে ভ্রমণ করার জন্য টিকেট ক্রয় করেছেন, তাদেরকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কানেকটিং ফ্লাইটের মাধ্যমে ঢাকায় আনা যাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে জানান, যাদের ভিসা এবং কাজের অনুমতি রয়েছে তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হবে।
"যারা ১৪, ১৫ ও ১৬ এপ্রিলের জন্য টিকিট কিনেছিলেন, তবে বিমানের কার্যক্রম স্থগিতের কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন নি, তাদের জন্যও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা করা হবে", যোগ করেন তিনি।
এছাড়া আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বলা হয়, "টিকেটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য যাত্রী পরিবহনের জন্য পরিচালিত বিশেষ ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ সাধারণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য চার্জের সমপরিমাণ প্রদেয় হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী যাত্রীদের পিসিআর টেস্ট নির্বিঘ্নে এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে ফলাফল প্রদান করবে"।
লকডাউন চলাকালে উল্লিখিত ৫টি দেশ ব্যতীত অন্যান্য দেশে যারা জরুরি প্রয়োজনে যেতে ইচ্ছুক, তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র সাপেক্ষে ট্রানজিট-প্যাসেঞ্জার হিসেবে বিশেষ ফ্লাইটে ভ্রমণ করতে পারবেন।
এ ৫টি দেশে বা ট্রানজিট যাত্রীগণ এয়ারপোর্টে আসার পথে পাসপোর্ট/ভ্যালিড ভিসা/বিমানের টিকিট/বিএমইটি কার্ড অথবা নিরাপত্তা এজেন্সি কর্তৃক ইস্যুকৃত পাস সঙ্গে রাখবেন।
আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সে ভার্চুয়াল সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।