২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বছরে ১১৫ মিলিয়ন টন বাড়তি কার্বন নিঃসরণ করবে: টিআইবি
রামপাল, মাতারবাড়ি, বাঁশখালী প্রকল্পসহ মোট ১৯টি কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬৩% বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ১১৫ মিলিয়ন টন বাড়তি কার্বন ডাইআক্সাইড নিঃসরণ করবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনাতে গিয়ে টিআইবির ক্লাইমেট ফাইন্যান্স পলিসি ইন্টিগ্রিটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. মাহফুজুল হক বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম কয়লা দূষণকারী দেশে রূপান্তরিত হবে, যা কার্বন নিঃসরণ কমানো সংক্রান্ত সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সাথে সাংঘর্ষিক।
আসন্ন কপ-২৬ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন উপলক্ষে টিআইবির অবস্থান ও সুপারিশপত্র প্রকাশের জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মাহফুজুল বলেন, দেশে প্রকল্পের কয়লা সমুদ্র ও নদী পথে আমদানি হবে। ফলে নদীর পানি দূষণসহ জলজ জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
"পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা নদীর ও সমুদ্রতটের জায়গা দখল করে কয়লা প্রকল্পটি আন্ধারমানিক নদী এবং রামনাবাদ চ্যানেলের ৪০ কিমি বিস্তৃত ইলিশের অভয়ারণ্য ও প্রজননক্ষেত্র ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।"
বৈশ্বিক ও জাতীয় উদ্বেগ উপেক্ষা করে ও পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়াই সুন্দরবনের কাছে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প স্থাপন করা হচ্ছে। ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি কর্তৃক সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চট্রগ্রাম ও কক্সবাজারে পরিকল্পিত ৮টি কয়লা প্রকল্প থেকে দূষণের ফলে ৩০ বছরে ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু ও কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে স্থাপিত কয়লা প্রকল্পের দূষণে ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র এবং এর আশেপাশের পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমনিতেই বাংলাদেশের উপকূলীয় স্থলভাগের ১১% তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চার ও পাঁচ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ঝুঁকিও ১৩০% বাড়বে।
দেশে ২০২০ সালের মধ্যে ১০% বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ৭৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে, যা মোট উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৩.৪৭%।
২০২০ সাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, উন্নত দেশগুলো তা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশের ৬টি গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) প্রকল্পে ৩৬৮ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন দিলেও অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত ২৮.৬ মিলিয়ন ডলার ছাড় দিয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৭.৭৭%।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কপ-২৬ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনকে প্যারিস চুক্তি পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)-এর সভাপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাই বাংলাদেশের এখানে ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
সম্মেলনে বিবেচনার জন্য তিনি যেসব সুপারিশ করেন তার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু বিষয়ক নীতি-নির্ধারণে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ ও উন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রতি অনুযায়ী প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল প্রদান নিশ্চিত করা।
"জিসিএফসহ জলবায়ু তহবিলে ঋণ নয়, অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান ও একটি ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ক আলাদা তহবিল গঠন করতে হবে।"
এছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে 'নেট জিরো' লক্ষ্যমাত্র অর্জনে ইনটেন্ডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন্স (আইএনডিসি) সহ প্রশমন বিষয়ক সকল কার্যক্রমে উন্নত দেগুলোর স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শতভাগ জ্বালানি উৎপাদনে উন্নত দেশগুলোকে পর্যাপ্ত জলবায়ু তহবিল, প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা প্রদানে সমন্বিতভাবে দাবি উত্থাপন করারও সুপারিশ করেন তিনি।
সরকারের করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ প্রস্তাবিত ইন্ট্রিগ্রেটেড এনার্জি এন্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) এ কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দেয়া ও বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ খাতের জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা ও সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করা।