৪০ বছর বয়সীরাও ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে এখন ৪০ বছর বয়সীরাও নিবন্ধন করতে পারছেন। এর আগে ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক এবং সম্মুখসারিতে থাকা ১৯টি শ্রেণিপেশার নাগরিকরাই www.surokkha.gov.bd ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারতেন।
৪০ বা তার বেশি বয়সীরা যাতে ভ্যাকসিন নিতে পারেন সে বিষয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সোমবার বিকেল থেকেই সুরক্ষা ওয়েবসাইটে ৪০ বছর বয়সীদের নিবন্ধন চালু করা হয়েছে।
সোমবার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'টিকা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, টিকা প্রদানের বিধিনিষেধ যেন কিছুটা শিথিল করা হয়'।
প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, ৪০ বছর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। গতকাল (রোববার) ৫৫ বছরের কম হলে কিন্তু টিকা দেওয়া হচ্ছিল না। সেজন্য আজকে বলে দেওয়া হয়েছে ৪০ বছর পর্যন্ত হলে টিকা দেওয়া যাবে। এটা আজকে (সোমবার) থেকেই কার্যকর হয়ে যাবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'তরুণ যারা আছেন আস্তে আস্তে তাদের জন্য টিকাগ্রহণ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যারা সম্মুখসারির যোদ্ধা আছেন প্রয়োজন হলে তাদের পরিবারকেও আস্তে আস্তে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিয়ে দিতে হবে'।
টিকা নিতে যারা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে পারেননি তারা তাদের এনআইডি নিয়ে টিকাকেন্দ্রে গেলে সেখানেও নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হলে সে যদি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যান, ওখানে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিতে পারবেন, সেই ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি কেন রেজিস্ট্রেশন করেননি সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
রোববার থেকে দেশের ১০০৫টি কেন্দ্রে ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়েছে। এতে কাজ করেছে ২৪০০টি টিম। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভ্যাকসিনেশন চলবে।
আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রথম মাসের টিকাদান কার্যক্রম চলবে জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, এই টিকার কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ। ১০০ জনের মধ্যে যদি ৭০ জন ইমিউন হয়ে যায় তাহলে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আমরা একটি সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে যাব।
ভ্যাকসিন নিলেও মাস্ক পরা এবং কিছুক্ষণ বাদে বাদে হাত পরিস্কার করার মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া অব্যাহত রাখতে হবে। মানে টিকা যারা নিয়েছে তাদেরকেও। এটা মনে করলে হবে না যে, আমি টিকা নিয়েছি তাই একদম নিরাপদ। সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।'
তিনি আরও জানান যে, দেশব্যাপী টিকা প্রদানের বিষয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা নেওয়ার বিষয়ে গ্রামাঞ্চলে মানুষের মাঝে এখনো একটু দ্বিধা থাকলেও সেটা শীঘ্র কেটে যাবে ।
তিনি বলেন, করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। লন্ডনে সেভাবেই করা হচ্ছে; এজন্য ১৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা যে নিতে হবে তা নয়, অন্তত তিন মাস পর্যন্ত এ কার্যকারিতা থাকে, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা চাচ্ছি দ্রুতই দ্বিতীয় ডোজটা দিয়ে দেওয়ার। আমি বলেছি একমাস বা দুইমাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে এগুলো শেষ করার। কারণ ভ্যাকসিনের যেন ডেট পেরিয়ে না যায় সেটাও দেখতে হবে'।
ফ্রন্ট লাইনারসদের আগে টিকা প্রদানের জন্য যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চিকিৎসক বা চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীগুলো এবং যারা এই কোভিড মোকাবেলায় সক্রিয় ছিল তাদের সবাইকে আগে ভ্যাকসিন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ।
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশের যত পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন, তাদের সবাইকেও এই টিকা দিতে হবে।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি নির্দেশনা পাঠানো উচিত।
তিনি টিকা গ্রহণকারীদের পরিচয় পত্র প্রদানের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'একটা আইডি কার্ডের মতো থাকতে হবে যে কারা ভ্যাকসিনটা নিল। এটা দেখিয়ে দ্বিতীয় ডোজটা নিতে হবে এবং সেই আইডেনটিটিটা তাদের কাছে থেকে যাবে, তাহলে কেউ বিদেশে গেলে তারা যে করোনাভ্যাকসিন নিয়েছে তার প্রমাণটা থাকবে'।