৪৮ লাখ টাকার পে অর্ডার বাস্তবে ৩৫০ টাকা!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/08/06/ctg_customs.jpg)
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মে এবং জুন মাসের দুটি নিলামে তিনটি লটের বিপরীতে মোট মূল্যের ১০% হারে প্রায় ৪৮ লাখ টাকার পে অর্ডার জমা দিয়েছিলেন খলিলুর রহমান। এর মধ্যে দুটি লটের সর্বোচ্চ দরদাতাও নির্বাচিত হন তিনি।
কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে এক্সিম ব্যাংকের শেখ মুজিব রোড শাখায় পে অর্ডার ভেরিফাই করতে গেলেই বিপত্তি বাঁধে।
প্রমাণিত হয়, মে এবং জুন মাসে অনুষ্ঠিত দুটি নিলামের ৩টি দরপত্রে দরদাতা খলিলুর রহমানের জমা দেওয়া ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৮ টাকার তিনটি পে অর্ডারের প্রকৃত মূল্য মাত্র ৩৫০ টাকা।
এই ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। পে অর্ডার তিনটি নগদায়নের জন্য ট্রেজারিতে পাঠানো হয়েছে।
দরদাতার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফ্লোর ম্যাট, পিভিসি ব্যানার এবং পিয়াজো ব্রান্ডের ১৮০টি সিএনজি ট্যাক্সির তিনটি পৃথক লটে দরপত্র জমা দেয় খলিলুর রহমান। পিভিসি ব্যানারের পাশাপাশি সিএনজি ট্যাক্সির লটেও সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় এই দরদাতা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখা সূত্র জানিয়েছে, দরদাতা খলিলুর রহমানের এমন কর্মকাণ্ড ফৌজদারী দণ্ডবিধি অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং কাস্টমসের নিলাম কার্যক্রমের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এই জালিয়াতির কারণে কাস্টমসের নিলাম শাখায় দাখিলকৃত এই দরদাতার সকল দরপত্র সমূহ বাতিল করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছে নিলাম শাখা। একই সাথে এই বিডার ভবিষ্যতে যাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য তাকে 'কালো তালিকাভুক্ত' করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম টিবিএসকে বলেন, "প্রাথমিক তদন্তে পে অর্ডার জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। পে অর্ডার তিনটি নগদায়নের জন্য ট্রেজারিতে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হলে জালিয়াতির দায়ে খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হবে"।
পে অর্ডার জালিয়াতি সম্পর্কে তিনি বলেন, "অন্য কোথাও থেকে পে অর্ডার প্রিন্ট করে সেখানে ইচ্ছেমতো টাকা বসিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সিল স্বাক্ষর জাল করে এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করছি"।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, মে মাসে অনুষ্ঠিত নিলামে ৩ কন্টেইনার পিভিসি ব্যানার পণ্যের একটি লটে ঘোষিত দরের ১০% মূল্য অগ্রিম বাবদ পে অর্ডারের মাধ্যমে ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৮ টাকা জমা দেন তিনি। ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৯ মে ইস্যু করা ২০২০১৩১৮ নম্বরের ওই পে অর্ডারের প্রকৃত মূল্য ১২৫ টাকা।
জুন মাসের নিলামে ১ কন্টেইনার ফ্লোর ম্যাট পণ্যের ক্যাটালগের দরপত্রে গত ৯ জুন ইস্যু করা ২০২০২০৫৮ নম্বর পে অর্ডারের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা দেন খলিলুর রহমান। একই তারিখ এবং পে অর্ডার নম্বরে ব্যাংক থেকে ইস্যু করা হয় ১০৫ টাকার পে অর্ডার।
একই তারিখে ২০২০২০৫৯ নম্বর পে অর্ডারে সিএনজি ট্যাক্সির ক্যাটালগের বিপরীতে ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে এই পে অর্ডার নম্বরের বিপরীতে ১২০ টাকার পে অর্ডার ইস্যু করে এক্সিম ব্যাংক।
এক্সিম ব্যাংক শেখ মুজিব রোড শাখার ব্যবস্থাপক এনায়েত করিম বলেন, "এই শাখা থেকে খলিলুর রহমানের নামে ইস্যুকৃত পে অর্ডারের তথ্য জানতে চায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত পে অর্ডারের সাথে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে পাঠানো পে অর্ডারের টাকার সংখ্যায় গড়মিল পাওয়া গেছে"।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার আল আমিন বলেন, "পে অর্ডার জালিয়াতির ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিলাম শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস এবং দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাসেল মাহমুদ এবং কামরুল হাসান এই কমিটিতে রয়েছেন"।
নিলামের দরদাতা খলিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "পে অর্ডার জালিয়াতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। কাস্টমসের নিলামে অংশ নেওয়া একটি সংঘবদ্ধ চক্র আমাকে নিলাম কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দিতে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে"।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্য বিভিন্ন কারণে বন্দর থেকে খালাস নেয় না আমদানিকারকরা। চোরাচালান, জালিয়াতি, এক পণ্য আমদানির ঘোষণায় ভিন্ন পণ্য আমদানি, শুল্ক ফাঁকি সহ বিভিন্ন কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাস স্থগিত করে। নিয়মানুযায়ী তাদের ৩০ দিনের মধ্যে এসব পণ্য খালাসের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস না নিলে এসব পণ্য ক্যাটালগ নির্ধারণের মাধ্যমে নিলামে তোলে কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ। নিলামে ঘোষিত দরের ১০% টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টমসের অনুকূলে দরপত্রের সাথে জমা দিতে হয়।