‘ওরা আমাকেও মেরে ফেললে পারত’
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে পুলিশের লাঠিপেটায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিহত ছাত্র আবরার ফাহাদের ভাইসহ চারজন আহত হয়েছেন।
বুধবার আবরারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ওই গ্রামে গেলে তাকে প্রতিহত করেন গ্রামবাসী। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ এ আক্রমণ চালায়।
বিকালে উপাচার্য সাইফুল রায়ডাঙ্গা গ্রামে আবরারের কবর জিয়ারতের পর তার মাকে সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় উত্তেজিত গ্রামবাসী উপাচার্যকে ঘিরে রেখে হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে উপাচার্য জেলা প্রশাসকের গাড়িতে চড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
তিনি চলে যাওয়ার পর পুলিশ গ্রামবাসীকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজসহ চারজন আহত হন। তাদের মধ্যে আবরারের একজন কাজিনের স্ত্রীও রয়েছেন।
ওদিকে, নিজ গ্রামে কজন পুলিশ সদস্যের অসদাচরণের শিকার হওয়ার পর আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ একটি ফেসবুক পোস্টে তার ক্ষোভ উগড়ে দেন।
একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তার গায়ে হাত দিয়েছেন এ কথার উল্লেখ করে তিনি লিখেন: ‘আমি ন্যায়বিচার চাই। কর্তৃপক্ষ যদি সেটা দিতেই না পারে, তবে আমাকেও মেরে ফেলুক। তাহলে আমার মা-বাবা একবারেই যা কষ্ট পাবার পেয়ে যাবেন।”
বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে (২১) রোববার রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে বুয়েটের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাসুক এলাহী তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে আবরারকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী।
রোববার রাতে আবরারের মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীরা টানা দুদিন আন্দোলন চালিয়ে গেলেও, বুয়েটের উপাচার্যের খোঁজ মিলছিল না। এমন অবস্থায় সমালোচনার মুখে পড়েন আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল বুয়েটের উপাচার্য।
এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার পর উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম দোতলা থেকে নেমে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সামনে এলে শুরু হয় হট্টগোল।
পুরো ঘটনাপ্রবাহে বুয়েট উপাচার্যকে ঘিরে দেশজুড়ে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ দেখা দেয়। এ প্রেক্ষিতে তিনি কুষ্টিয়ায় আবরারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানেও তাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে রায়ডাঙ্গা গ্রাম।
এদিকে, আবরারের জন্য বুধবার বেলা ১১টার দিকে জেলা স্কুল জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে আবরারের সহপাঠী ও শিক্ষকসহ কয়েকশ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এ সময় আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ বুয়েট কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে তাদের অনেককেই মামলায় বাদ দেওয়া হয়েছে। যার নেতৃত্বে নির্যাতন করা হয়েছে তাকেই মামলায় আসামী করা হয়নি।”
তিনি বাদ-পড়াদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানান। তবে তিনি এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জানেন স্বজন হারানোর ব্যথা। তিনি যদি সিসিটিভির ফুটেজ দেখেন তাহলে আমার বিশ্বাস আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে।”