‘না ভেঙ্গে’ সংস্কার করা হবে টিএসসি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মূল কাঠামো 'ভাঙ্গা হচ্ছে না'। তবে কিছু সংযোজনসহ নতুনভাবে সংস্কার করা হবে স্থাপনাটি।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
সভায় উপস্থিত থাকা একটি সূত্র সন্ধ্যায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এই তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, চার সপ্তাহ পরে আরেকটি সভা হবে, তখন এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর টিএসসির বর্তমান সুইমিং পুলের জায়গায় ১০ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হবে।
জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম শিকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, টিএসসি নিয়ে গণপূর্তের সঙ্গে দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতবারের পরামর্শ অনুযায়ী টিএসসি না ভেঙে নকশা উপস্থাপন করেছে তারা। সেটি আমাদের পছন্দ হয়েছে।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম শিকদারসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তারা অংশ নেন। অপরদিকে, গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রকৌশলীসহ একটি টিম সভায় অংশ নেন।
টিএসসির স্থাপনা ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে-এমন খবরে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। টিএসসিকে 'আধুনিক স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শন' উল্লেখ করে তা ভেঙে ফেলার বিরোধিতা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-শিক্ষকসহ ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, 'পৃথিবীর নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ছবি দেখেই চেনা যায় কিছু ঐতিহ্য ধারণ করা স্থাপনার মাধ্যমে। শত শত বছরের পুরোনো হয়ে গেলেও এগুলোকে সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন স্থাপনার মধ্যে আছে কার্জন হল, এসএম হল ও টিএসসি। এর মধ্যে টিএসসি ষাটের দশকে নির্মিত অপেক্ষাকৃত আধুনিক স্থাপত্যের একটি সুন্দর নিদর্শন।'
'বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের পূর্ববর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ঐতিহ্য ধারণ করে এই টিএসসি। রক্ষণাবেক্ষণের বদলে এটিকে ভেঙে এখন বহুতল ভবন নির্মাণের আয়োজন চলছে। শুধু শুধু অর্থনীতিবিদদেরই সমালোচনা করা হয় যে তাঁরা সবকিছুর বাজারদর বোঝে, কিন্তু কোনো কিছুর প্রকৃত মূল্য বোঝে না!'
গ্রিক স্থপতি কন্সটান্টিন অ্যাপোস্টলোস ডক্সিয়াডেস গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির নকশা করেন। নকশার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গ্রামীণ বসতির চিরায়ত ঐতিহ্যের দিকটি মাথায় রেখেছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও যুগের চাহিদা অনুযাযী টিএসসিকে আধুনিকায়নের লক্ষে গত অক্টোবরে আলোচনা শুরু করে পিডব্লিউডি। আলোচনার মাধ্যমে আধুনিক কিছু সুযোগ সুবিধার কথা উঠে আসে।