নানা অজুহাতে ঢাকার প্রবেশমুখে চলছে চাঁদা আদায়
মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটা। দয়াগঞ্জ সিটি করর্পোরেশন মার্কেটের সামনের সড়কে অন্তত ১০ জন যুবক রাস্তার দুপাশে অবস্থান করছে। দক্ষিণ অঞ্চলে বহু ট্রাক এই পথে ঢাকায় প্রবেশ করছে আবার এ পথেই ফিরে যাচ্ছে। ডিএসসিসির পরিচয়ে ওই যুবকেরা মালবাহী এসব পরিবহন আটকে সিটি করপোরেশনের টোল চাইছে। টোল দিতে না চাইলে চালকদের সাথে তর্কে জড়াচ্ছে।
তারা কিসের টাকা নিচ্ছে জানতে চাইলে পণ্যবাহী এক ট্রাকের ড্রাইভার জমশেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমার কাছ থেকে ৬০ টাকা নিয়েছে, কোনো স্লিপ দেয়নি। সিটি করপোরেশনের নামেই তারা ৫০ বা ১০০ যার কাছে যেমন পারে টাকা নেয়।"
নবাবপুর রোডে কথা হয় ট্রাক চালকের রনি মিয়ার সাথে। তিনি টিবিএসকে বলেন, ফ্লাইওভারের টোল, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় টাকা দিতে হয়।
"আমরা জনি না তারা কিসের টাকা নেয় তবে দিতে না চাইলে ঝামেলা করে এজন্য বাধ্য হয়ে দিতে হয়।"
তিনি ঢাকা দক্ষিণ পৌরসভার ১০০ টাকার টোল পরিশোধের একটি রশিদ দেখান। কিন্তু এই নামে সিটি করপোরেশনের কোনো পৌরসভাই নেই।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার শেখপাড়া থেকে কাঁচামাল নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এসেছেন মো. সোহেল রানা।
তিনি বলেন, গাবতলীতে টাকা না দিলে লুকিং গ্লাস ভেঙে দেওয়া হয়। দরজায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। সেখান থেকে কারওয়ান বাজারে আসার পর গাড়ি থেকে পণ্য নামাতে অপেক্ষারত সময়ের জন্য দিতে হয় ১০০ টাকা।
এই টাকার বিপরীতেও কোনো রসিদ দেওয়া হয় না।
এভাবে একাধিক ট্রাক চালকের সাথে কথা বললে তারা জানায়, শনির আখড়া, চানখারপুল, জয় কালি মন্দির ও রাজধানী সুপার মার্কেটের পাশে এভাবে চাঁদা দিতে হয় নিয়মিত। স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজেশেই এই চাঁদা নেয় তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের মহা-ব্যবস্থাপক (পরিবহন) শহিদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, ট্রাকসহ পণ্যবাহী এসব পরিবহন থেকে চাঁদা নেওয়ার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
"এভাবে চাদা নেওয়ার ঘটনা আমরা জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব। এমন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে," বলেন তিনি।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির আয় বাড়াতে ১২ নভেম্বর ২০২১ থেকে এক বছরের জন্য ৭-ইলেভেন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আফতাব উদ্দিনকে পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
যানবাহনের ধরন এবং কোন কোন স্থান থেকে সিটি টোল আদায় করা যাবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। তবে সেই কার্যাদেশের কোথাও পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থেকে টোল আদায়ের নির্দেশনা নেই।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম টিবিএসকে বলেন, "তারা নিয়ম ভঙ্গ করে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থেকে টোল আদায় করছে। আমরা এটি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেছি, কোনো সমাধান পাইনি। এরপর আমাদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।"