ঈদের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো অনলাইন ক্লাস চালু হতে পারে
কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঈদ-উল-আযহার ছুটির পর অনলাইনেই ক্লাস-পরীক্ষা চালু করতে পারে।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার গত কয়েকদিন ধরে ১৫ শতাংশেরও বেশি। বেড়েছে মৃতের সংখ্যাও।
এমতাবস্থায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সশরীরে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দেশের বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কমিশন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আবার অনলাইন ক্লাস চালুর বিষয়ে চিঠি দেবে।
"তরুণদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণের হার কম তাই আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি," তিনি বলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় সংক্রমণের হার পর্যবেক্ষণ করছে। ঈদের ছুটির পর সংক্রমণের হার বাড়লে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে বলা হবে।
সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদিও অনলাইনে ক্লাস শুরু করার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু তাদের কেউই দরিদ্র ও গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের দুর্দশার সমাধানে তেমন উদ্যোগ দেখায়নি।
২০২০ এবং ২০২১ সালে গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দুর্বল বা ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় এবং মোবাইল ডেটা সংক্রান্ত ব্যয়ের কারণে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেনি।
২০২১ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর একটি সমীক্ষা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে স্মার্টফোন রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগেরই ইন্টারনেট সংযোগ নেই বা মোবাইল ডেটা কেনার সামর্থ্য নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক একেএম মাকসুদ কামাল টিবিএসকে বলেন, প্রাক-কোভিড সময়ের তুলনায় এখন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আরো দক্ষ শিক্ষকদের নিয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু করতে প্রস্তুত তারা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কাছে এখন ডিজিটাল ডিভাইস রয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা অনলাইন ক্লাসের জন্য সবকিছুর ব্যবস্থা করব এবং এমনকি শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোনও দেব। ডিজিটাল ডিভাইস বা ব্যয়বহুল ডেটার অভাবে কেউ অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে না- এমনটা হবেনা।"
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর আতিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, তাদের জন্য এখন অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা পরিচালনা করা সহজ।
"আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পারবে। অবশ্যই আমরা সরকারি নির্দেশাবলী অনুসরণ করব।"
"আমরা কোভিড সময়কালে, বিশেষ করে ২০২০ এবং ২০২১ সালে সব শিক্ষার্থীর জন্য ২০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করেছি। যেসব শিক্ষার্থীর বাবা-মা মারা গেছেন, তাদের জন্য ফুল স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে," যোগ করেন তিনি।
কোভিড-১৯-এর জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, সংক্রমণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখলে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন তারা।
"সরকারকে অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। সংক্রমণের হার যদি অপরিবর্তিত থাকে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেওয়া বন্ধও করতে হবে," বলেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার রোধে সরকার ২০২০ সালের মার্চে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। সেবছরই ৩০ মার্চ থেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর অনুমতি দেয় সরকার।
একই দিন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।