এখন বাড়ি ফিরলে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা আছে: নড়াইলে লাঞ্ছিত শিক্ষক
নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টের জের ধরে ব্যাপক সহিংসতা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় একমাস পূর্ণ হলেও বাড়ি ফেরেননি তিনি।
আতঙ্কে আত্মগোপনে আছেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন তিনি।
'এই মূহুর্তে বাড়িতে ফিরলে আবারও অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এলাকার পরিবেশ এখনো ঠিক হয়নি। তাই আত্মগোপনে আছি,' বলেন স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এই মূহুর্তে কলেজেও ফিরতে চান না তিনি।
'এলাকাবাসীর সাথে প্রশাসন আলোচনা করে আগে পরিবেশ ঠিক করা উচিত। তারপর কলেজ খুলুক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি কলেজে ফিরব।'
১৮ জুন সংঘাতের পর থেকে বন্ধ রয়েছে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে। আগে কয়েকবার পরিচালনা পর্ষদ কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অচিন কুমার চক্রবর্তী বলেন, 'আমরা আগে কয়েকবার কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে সর্বশেষ ২০ জুলাই কলেজ খোলার জন্য প্রশাসনের সম্মতি পেয়েছি। সেভাবে প্রস্তুতি চলছে।'
'প্রাথমিকভাবে হয়তো যাদের আশু পরীক্ষা আছে, সেইসব শিক্ষার্থীদের কলেজে ক্লাস করানো হবে। পরে ধীরে ধীরে পূর্নাঙ্গভাবে কলেজ চালু করা হবে।'
অধ্যক্ষকে কলেজে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'পরিচালনা পর্ষদের সবাই মিলে স্বপন কুমার বিশ্বাসের কাছে যাব। তাকে পুনরায় কলেজে আসার অনুরোধ করব। আমারা সেই চেষ্টা করছি।'
'আমাদের ইচ্ছা আছে গ্রামের সব মানুষকে ডেকে নিয়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে তাকে আবারও কলেজে ফিরিয়ে আনব', যোগ করেন তিনি।
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে এক হিন্দু শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে কলেজে পুলিশের সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করা হয়।
গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন স্বপন কুমার। মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে গত ১৮ জুন এ নিয়ে দিনভর চলে সহিংসতা।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি।
শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ।
ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন নাশকতা ও শিক্ষককে হেনস্তা করার অভিযোগে মামলা করে স্থানীয় পুলিশ।
আজ এ ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
নড়াইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মো. রহমত উল্লাহ রনিকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর তার ছাত্রত্ব বাতিল করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহামুদুর রহমান বলেন, 'অধ্যক্ষের বাড়ীতে এখনো পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ওই কলেজে ও এলাকায় পুলিশ দিনরাত টহল দিচ্ছে। কারও আতঙ্কের কারণ নেই।'