পানির দাম ২৮ শতাংশ বাড়ালো খুলনা ওয়াসা
হঠাৎ করেই পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে খুলনা ওয়াসা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই দাম কার্যকর হবে। এনিয়ে গত ৭ বছরে ৫ দফা দাম বাড়ালো খুলনায় পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
নতুন দাম অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানি ব্যবহারের জন্য দিতে হবে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহককে দিতে হবে ১৪ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে সার্ভিজ চার্জ, ডিমান্ড চার্জ ও ভ্যাট।
এর আগে, আবাসিকে পানির দর ছিল ৬ টাকা ৯১ পয়সা এবং বাণিজ্যিক দর ছিল প্রতি ইউনিট ১০ টাকা। সেই হিসাবে, আবাসিকে দর বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬ এবং বাণিজ্যিকে ২৮ দশমিক ৫৮ শতাশ। খুলনা শহরে ওয়াসার গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার।
এ প্রসঙ্গে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ বলেন, 'পানির মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব ওয়াসা বোর্ডে উত্থাপন করা হয় গত মে মাসে। নিয়ম অনুযায়ী, সেবা খাতের দাম ২০ শতাংশের ওপরে বাড়ালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। এজন্য মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব সেখানে পাঠানো হয়। গত জুন মাসে এই প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়'।
তিনি আরও বলেন, 'শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই খুলনায় পানির সংকট থাকে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এই সংকট দূর হয়ে যায়। পানি সংকটের মধ্যে দাম না বাড়িয়ে, আমরা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি'।
খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ১ জানুয়ারি ৪ টাকা ইউনিট ধরে পানির নতুন মূল্য তালিকা অনুমোদন করে ওয়াসা বোর্ড।
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে দাম বেড়ে দাড়ায় প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৮০ পয়সা।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে, পানির দাম আরও ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে ইউনিট প্রতি মূল্য দাড়ায় ৫ টাকা ৭৬ পয়সা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আরও ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে ওয়াসা। এতে প্রতি ইউনিট পানির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬ টাকা ৯১ পয়সা। গত আড়াই বছর এই মূল্যই কার্যকর ছিল।
এদিকে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পানির মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণায় ক্ষুদ্ধ খুলনার নাগরিক নেতারা। তাদের দাবি, গ্রাহক সেবা আইন অনুযায়ী সেবার দাম বৃদ্ধির আগে অবশ্যই গণশুনানি করতে হবে। ওয়াসা কোনো শুনানি করেনি। নতুন মূল্য কার্যকর হলে মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে। তারা এই মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নামক সংগঠনের খুলনা জেলা শাখার সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, 'গ্রাহকদের মতামত ছাড়া ওয়াসা এভাবে পানির দাম বাড়াতে পারে না। মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা মানুষের ঘাড়ে অতিরিক্ত এই দাম- মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা এর মতো হবে'।
তিনি বলেন, 'আয় বাড়ানোর জন্য পানির দাম না বাড়িয়ে, ওয়াসার উচিত নিজেদের খরচ কমানো। পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আমরা আন্দোলনে যাব'।
ওয়াসার প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ বলেন, 'অন্যান্য শহরের তুলনায় খুলনা ওয়াসার পানির দাম কম। এই দাম দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যায় না। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। প্রতিবছরই এই ভর্তুকি কমছে'।
'সর্বশেষ পানির মূল্য বৃদ্ধি ও নিজস্ব আয় না বাড়ালে ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এজন্য ওয়াসা বোর্ড সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে'- বলেন তিনি।