এবার বাড়লো বোতলজাত পানি, কোমল পানীয়র দাম
দুধ, ডিম, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, আটা-ময়দা, রুটি-বিস্কুট সবকিছুর দাম তো আগেই বেড়েছে। উচ্চমূল্যের এই বাজারে এবার এই তালিকায় যুক্ত হলো বোতলজাত পানি ও কোমল পানীয়র দাম।
ঢাকার বিভিন্ন সুপার শপ ও মুদি দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আধা লিটারের বোতলের পানির দাম না বাড়লেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দুই লিটারের পানির দাম বেড়েছে। দুই লিটারের বোতলজাত পানির দাম এখন ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা, দেড় লিটার পানির দাম ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।
তাছাড়া পাঁচ লিটারের পানির বোতলের দাম ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে। তবে, আধা লিটার পানির বোতলের দাম আপাতত অপরিবর্তিত আছে।
তবে কোমল পানীয়ের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা দেখা গেছে। বেশি পরিমাণের কোমল পানীয়র দাম না বাড়লেও ছোট সেগমেন্টের পানীয়র দাম বেড়েছে।
এর মধ্যে ২৫০ গ্রামের কোকাকোলা ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে। একইসাথে, পেপসিকোর পণ্য মাউন্টেন ডিউয়ের একই পরিমাণের বোতলের দাম ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে।
পানি ও কোমল পানীয় উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো বলছে, পানি ও পানীয়র দাম বাড়ানোর কারণ উৎপাদন খরচ ও ডিস্ট্রিবিউশন খরচ বেড়েছে। মূলত পেট বোতল তৈরির কাঁচামাল আমদানির খরচই পানির দাম বৃদ্ধিতে বেশি ভুমিকা রেখেছে বলে জানা যায়।
পারটেক্স গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. নাহিদ ইউসুফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পারটেক্স গ্রুপ পেট বোতলের কাঁচামাল আমদানি করে দুবাই ও সৌদি আরব থেকে। এই কাঁচামালের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, ফ্রেইট চার্জ বেড়েছে। যে কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।"
"আবার দেশে আমাদের ডিষ্ট্রিবিউশন খরচ বাড়াতে হয়েছে। এসব কারণেই পানির দাম বেড়েছে,"
"কাঁচামালের দাম কমে গেলে আবার পানির দাম সমন্বয়ের চিন্তা রয়েছে," যোগ করেন নাহিদ।
পানি উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রথম সারির ব্র্যান্ডগুলোর একটি পারটেক্স গ্রুপের মাম। ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেড় লিটার মামের বোতলের দাম ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল ৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একইভাবে কিনলে দুই লিটারের বোতল ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের দুই লিটার পানির দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে কয়েকদিনের মধ্যেই সেটা আবার আগের দামেই ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কারওয়ান বাজারে বিক্রমপুর ভ্যারাইটিজ স্টোরের বিক্রেতা ইয়াসিন আরাফাত বলেন, "দু-একটি কোম্পানি পানির দাম বাড়িয়েছে। তবে সবাই এক লিটারের উপরের বোতলগুলোর দাম বাড়িয়েছে। ছোট পানির বোতলে দাম বাড়ায়নি। এর মধ্যে ফ্রেশ ব্র্যান্ডের দুই লিটার বোতলে পানির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে আবার কমিয়েছে তারা।"
বিভিন্ন মুদি দোকান, সুপারশপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, স্টোরগুলোতে মাম, ফ্রেশ, কিনলে, অ্যাকুয়াফিনা, জীবন, প্রাণ, ওয়াসার শান্তিসহ কয়েকটি ব্র্যান্ডের পানিই বেশি পাওয়া যায়।
খুচরা দোকানিরা জানান, দু একটি ব্র্যান্ড যখন কোন পণ্যের দাম বাড়ায়, অন্য কোম্পানিগুলোও একই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন দু-তিনটি ব্র্যান্ড দাম বাড়িয়েছে, বাকিরাও বাড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে পানির বাজার এখন হাজার কোটি টাকার। প্রতি বছর ৩৫-৪০ কোটি লিটার বোতলজাত পানি বিক্রি হয়।
ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী বড় বড় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই এখন পানির ব্যবসা রয়েছে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কোকাকোলা কিনলে, মেঘনা ফ্রেশ, সিটি জীবন, পেপসিকোর অ্যাকুয়াফিনা, প্রাণ আরএফএল এর প্রাণ, একমি গ্রুপের একমি প্রিমিয়াম ড্রিংকিং ওয়াটার সহ প্রায় ৩০টির বেশি ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানি সারাদেশে বিক্রি হয়।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫-২০ শতাংশ হারে বোতলজাত পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে করোনা সংক্রমণের প্রথম বছরে অর্থাৎ ২০১৯ সালে এই পানির ব্যবসা প্রায় অর্ধেক কমে গেলেও এখন আবার বাজার স্বাভাবিক হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইউসুফ।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে বোতলজাত পানির ব্যবসা শুরু হয় ১৯৯০-এর দশকে। সে সময় বোতলজাত পানির ব্যবহার বিত্তশালীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। পরবর্তীতে বোতলজাত পানি জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে, লোকেরা হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস, অনুষ্ঠান এবং ভ্রমণে গেলে নিয়মিত বোতলজাত পানি পান করছে।