বিএম ডিপো বিস্ফোরণ: ১৩ কর্মী জীবন দিলেও আলোর মুখ দেখেনি ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৩ কর্মীসহ মোট ৫১ জন প্রাণ দেওয়ার দুই মাস পার হলেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি এখনও। এমন কি দুর্ঘটনার ক্ষত বয়ে বেড়ানো প্রতিষ্ঠানটির তদন্ত ঠিক কোন পর্যায়ে আছে, তারও কোনো তথ্য নেই তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে।
গত ৪ জুন রাতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিমকে প্রধান করে গঠিত ৭ সদস্যের এ তদন্ত কমিটিতে সহকারী পরিচালক (চট্টগ্রাম) আনিসুর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটি গঠনের পর দুই মাস পার হতে চললেও তাঁরা কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। উল্টো ঊর্ধ্বতন মহল থেকে তদন্ত কমিটির সদস্যদের এ নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে তদন্ত কমিটির প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম ও সদস্যসচিব আনিসুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।
তদন্ত কমিটির সদস্য ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং কমপ্লেক্সের উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল মমিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ শেষ হয়েছে। তবে এ নিয়ে যা বলার তা মহাপরিচালক বলবেন। আমাদের এ বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ আছে।"
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, "ঈদুল আযহার আগেই মহাপরিচালকের কার্যালয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে কী আছে তা কমিটির সদস্যদের কাছে পরিস্কার নয়।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া শাখার জ্যেষ্ঠ স্টাফ অফিসার (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, "তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এসব রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ে সরাসরি জমা হয়, আমাদের জানানো হয় না।"
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অগ্নি অনুবিভাগ) মোসাম্মাৎ শাহানারা খাতুন টিবিএসকে বলেন, "রিপোর্ট জমা হয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। সচিব মহোদয়ের কাছে থাকলে জানানো হবে।"
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৫১ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৪৬ জন। এদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই শাখার ১০ কর্মী নিহত হয়। নিখোঁজ আছেন আরও ৩ কর্মী। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও চট্টগ্রাম বন্দর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত দুটি রিপোর্টেই ডিপো কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ডিপো মালিকের তাদের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যালকে এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৫১ জনের প্রাণহানী হলেও মালিক পক্ষকে বাদ দিয়ে একটি মামলা দায়ের করা ছাড়া দৃশ্যত কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক টিবিএসকে বলেন, "পুলিশের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। সে রিপোর্ট টা পেলে, তার সঙ্গে অন্যান্য রিপোর্টগুলোকে এক করে একটি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"