যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাব, নষ্ট হতে চলেছে এস এম সুলতানের আঁকা ছবি
চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনের মাধ্যমে তিমিরেই রয়ে গেছে নড়াইল, জাতি তথা মানবতার কল্যাণে শিল্পীর আজন্ম লালিত সকল ভাবনা, উপলব্ধি। শিল্পীর বাসস্থান চিত্রা নদীর তীর ঘেঁষে সরকারিভাবে নির্মিত হয়েছে সুলতান কমপ্লেক্স, কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে গুণী এই শিল্পীর নিজ হাতে আঁকা ছবিগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।
এখানে নেই আধুনিক গ্যালারি ও সার্বক্ষণিক বিদুৎ ব্যবস্থা, ছবিগুলো সংরক্ষণের জন্য গত ১৬ বছরেও বরাদ্দ হয়নি পর্যাপ্ত হিউমিডিফায়ার। ফলে নষ্ট হতে চলেছে লাল মিয়ার নিজ হাতে আঁকা মূল্যবান ছবিগুলো। সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে দ্রুত গুণী এই শিল্পীর ছবি সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছেন সুলতান প্রেমীরা।
১৯৯৪ সালের ১০অক্টোবর ৫৯ বছর বয়সে তার মৃত্যুর পর ২০০৩ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নির্মাণ করে 'এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা। ছবি সংরক্ষণের জন্য ২০০৬ সালে সেখানে ২তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে থাকা সুলতানের নিজ হাতে আঁকা ২৩টি ছবি সংগ্রহ করে রাখা হয় এই ভবনে।
ভবনের নিচ তলায় রয়েছে ৪টি মূল ছবি এবং ২য় তলায় রয়েছে ১৯টি মূল ছবি। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় সুলতানের আঁকা ছবির ৫১টি রেপলিকা। এই ভবনে মূল ছবি এবং রেপলিকা মিলিয়ে এস এম সুলতানের নিজ হাতে আঁকা চিত্রকর্ম রয়েছে ৭৪টি।
এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা সূত্রে জানা গেছে, ভবনের গ্যালারিতে সংরক্ষিত ছবি ভাল রাখার জন্য বছরে ৮/৯ মাস প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা এসি চালাতে হয় এবং ১২ মাসই প্রতিদিন নিয়মিত ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা করে হিউমিডিফায়ার (ডিমার) চালাতে হয়। ভবনে মোট প্রয়োজন ৬টি হিউমিডিফায়ার। ভবন নির্মাণের সময় বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪টি, তখন থেকেই ২টির সল্পতা গ্যালারিতে।
এদিকে তিন বছর আগের ৪টি হিউমিডিফায়ারের মধ্যে ২টি নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে ২টি চালু আছে এবং ৪টির স্বল্পতা রয়েছে।
সুলতান প্রেমী শুভ সরকার বলেন, সুলতানের কিছু ছবি অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়েছে। এখনও কয়েকটি ছবি মেরামত করা হয়নি। দ্রুত ছবিগুলো মেরামত করা প্রয়োজন।
আর এক সুলতাম প্রেমী রুপক মুখার্জী বলেন, যে পরিমাণ আলো বাতাসে ছবিগুলো রাখা দরকার, নিম্ন মানের ভবনের কারণে সেভাবে রাখা হচ্ছে না।
এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার অফিস সহায়ক নয়ন বৈদ্য জানান, প্রতিদিনই গ্যালারিতে রাখা সব ছবি যত্ন সহকারে পরিষ্কার করা হয়। নিয়মিত নির্ধারিত সময়ে এসি চালানো হয়। ছবি ভাল রাখার জন্য এখানে সার্বক্ষণিক বিদুৎ ব্যবস্থা প্রয়োজন।
"বর্তমানে প্রতিদিনই লোডশেডিং হচ্ছে ফলে সময় মত এসি এবং হিউমিডিফায়ার চালাতে পারছি না। এতে মূল্যবান এ ছবিগুলো যথাযথ ভাবে যত্ন করতে পারছি না," গ্যালারিতে সার্বক্ষণিক বিদুৎ ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
প্রতি বছর ঢাকা থেকে এসে ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যার দায়িত্ব থাকা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রকর্ম সংরক্ষণবিদ শিল্পী মোহাম্মদ হাসানুর রহমান (রিয়াজ) বলেন, সুলতানের ছবিগুলো যেভাবে রাখা প্রয়োজন সেভাবে রাখা হচ্ছে না। এতে ছবিগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
"এখানে আধুনিক ভবন করা জরুরি। ছবিগুলোর মধ্যে ৪-৫ টি ছবি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে তা না হলে ছবিগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। নতুন ভবন নির্মাণ করে চিত্রকর্মগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করলে গুণী এই শিল্পীর ছবিগুলো শত বছর ভাল থাকবে।"
সুলতান গবেষক তারেক আলম বলেন, সুলতান অনেক সময় ছবিতে রং হিসেবে ব্যবহার করতেন প্রাকৃতিক উপাদান (গাছের পাতা ও কশ)। ফলে তার নিজ হাতে আকা ছবিগুলো স্থায়ী নয়। সুলতানের ছবি আমাদের দেশের জাতীয় সম্পদ। অধুনিক প্রযুক্তিতে ছবিগুলো সংরক্ষণ করে দ্রুত আধুনিক মানের ভবন নির্মাণ করে মহা মূল্যবান এই ছবিগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার দাবি করেন এই সুলতান গবেষক।
এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জী বলেন, এখানে নতুন একটি আধুনিক ভবন নির্মাণ করার জন্য চেষ্টা চলছে। নতুন ভবন হলে ছবিগুলো আরও যত্ন সহকারে রাখা যাবে বলে মনে করছেন তিনি।