চাকরি পাচ্ছেন চা–শ্রমিক মাকে নিয়ে পোস্ট দেয়া সেই সন্তোষ
চাকরি পাচ্ছেন চা–শ্রমিক মাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেয়া মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সন্তোষ রবি দাস। তাকে একটি স্কুলে খণ্ডকালীন চাকরি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন।
সিফাত উদ্দিন বলেন, রবিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সন্তোষকে ডাকা হয়েছে। কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে তার চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রসাশক সন্তোষের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেবেন।
ইতিমধ্যে কমলগঞ্জের ইউএনও ফোন করে কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বরাবর একটি আবেদনপত্র তৈরি করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সন্তোষ রবি দাস। তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাকরি দিতে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কবে থেকে যোগদান করতে পারব। অনেকে সেলসে চাকরি করার অফার দিচ্ছে। কিন্তু আমার ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও কোর্স করা আছে। ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং বা রিসার্চ বিষয়ক চাকরির কথা কেউ বলেনি।'
সন্তোষ রবি দাস আরও বলেন, 'চাকরিটা আমার প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে চা শ্রমিকদের মজুরি যদি না বাড়ে তাহলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চা শ্রমিকদের অনাহারে থাকতে হবে। আমি পোস্টটি দিয়েছিলাম আমার মা সহ সব চা শ্রমিকের করুণ অবস্থা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাকে চাকরি দিয়ে চা শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনটা যেন ভিন্ন খাতে না নেয়া হয়।'
মৌলভীবাজার জেলার শমসেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা-বাগানের এক চা–শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষ রবি দাসের। সম্প্রতি ফেসবুকে তার একটি লেখা ভাইরাল হয়। ওই স্ট্যাটাসে তিনি জানান, জন্মের ছয় মাসের মাথায় বাবাকে হারান। মা চা-বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। ২০০৭ সালে সন্তোষ রবি দাস যখন ক্লাস ফাইভে পড়েন তখন তার মায়ের মজুরি ছিল ৮৮ টাকা। পঞ্চম শ্রেণির পর ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুলে পাঁচ বছরের জন্য বিনা মূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পান। তখন তার মা সামান্য আয়ের একটা অংশ থেকে তাকে টিফিন খাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দিতেন। ২০১৩ সালে বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হন। তখন তার মা দৈনিক ১০২ টাকা করে মজুরি পেতেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দেন মা।
এইচএসসির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোচিংয়ের টাকা জোগাতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আবার তার মাকে ঋণ নিতে হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সন্তোষ। এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়তা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সন্তোষ।