উত্তরা-আগারগাঁও মেট্রোরেলের ভায়াডাক্ট পুরোপুরি প্রস্তুত, স্টেশনের কাজও শেষ পর্যায়ে
রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের ট্র্যাক নির্মাণ শেষ হয়েছে বেশ আগেই। বিদ্যুত সংযোগ, স্বয়ংক্রিয় ট্রেন পরিচালনার প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে। এক কথায় দেশের প্রথম উড়াল মেট্রো রেলের ১১.৭৩ কিলোমিটার লাইনের ভায়াডাক্টে কোন কাজ আর বাকি নেই।
এ অংশে চলাচল করতে প্রয়োজনীয় ১০ ট্রেন জাপান থেকে দেশে এসেছে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যেই। সর্বশেষ মোংলা বন্দরে আসা দুই সেট ট্রেন যোগ করলে দেশের সীমানায় এ পর্যন্ত এসেছে ১৭ সেট ট্রেন। ফাংশনাল টেস্ট, পারফরমেন্স টেস্টে উতড়ে যাওয়া এই ১০ ট্রেন দিয়েই সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন থেকে পরিচালনা করা হবে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট।
সব মিলে আগামী ডিসেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে প্রথমবারের মত মেট্রো রেল পরিচালনায় আর কোন বড় বাধা নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক।
সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, উত্তরা-আগারগাঁও মেট্রো রেলের ভায়াডাক্টে আর কোন কাজ বাকি নেই। এ অংশের নয়টি স্টেশনের কাজও শেষ হয়েছে। কয়েকটি স্টেশনে লিফট ও এসকেলেটরের কাজ চলছে। তাছাড়া চারটি স্টেশনের এন্ট্রি-এক্সিট নির্মাণের কিছু কাজ বাকি আছে বলেও তিনি জানান।
মেট্রো রেল প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরতে ডিএমটিসিএল এর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার মেট্রো রেল নির্মাণে নেয়া এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পে জুলাই পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৮১.৭০%। এর মধ্যে মতিঝিল-আগারগাঁও অংশে অগ্রগতি হয়েছে ৮১.৮৬%। আর আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা উত্তরা- আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৩.৮৬%।
এ সময় তিনি জানান, উত্তরা ডিপোতে রিসিভিং সাব-স্টেশন (আরএসএস) এর পূর্ত কাজ শেষ করে বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
ডিপো এলাকায় ১৯ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ডিপো এলাকার ১৭টি লিফটের মধ্যে ১৬টির ইন্সটলেশন ও মেকানিক্যাল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ডিপোর অভ্যন্তরে মেট্রোরেল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজও শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ সময় তিনি জানান, উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্টে সম্পূর্ণ অংশে রেল লাইন (২৫.২৩ ট্র্যাক-কিলোমিটার) স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ভায়াডাক্টের উপর আগারগাঁও পর্যন্ত ওসিএস মাস্ট স্থাপন এবং সম্পূর্ণ ওয়্যারিং সম্পন্ন করে চালু করা হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত টেলিকমিউনিকেশান সিগনালিং সিস্টেমের ইকুইপমেন্ট স্থাপন সম্পন্ন করে টেস্টিং চলছে।
এ সময় তিনি জানান, এ অংশে ৯টি স্টেশনে ৩৬টি লিফট এর মধ্যে ২৪ টির ইন্সটলেশন ও মেকানিক্যাল কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৪টির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই অংশে স্থাপিতব্য ৫৪টি এসকেলেটরের মধ্যে ২৬টির স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০টির স্থাপনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
প্রথম পাঁচটি স্টেশনে যাত্রীদের উঠানামার ব্যবস্থা সম্পন্ন হলেও চারটির প্রবেশ ও বহির্গমন পথে কাজ এখনও চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই চার স্টেশনে সরকারি ভূমি ও ভূমি অধিগ্রহণের বিষয় আছে।
এই চার স্টেশনের বহির্গমন ফুটপাতে স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অধিগ্রহণ করা ভূমিতে ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই কাজও শেষ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
১ সেপ্টেম্বর থেকে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট
মেট্রো রেলের প্রথম অংশের ভৌত কাজ শেষে ট্রেন অপারেশনে চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে বাড়তি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল এমডি।
তিনি বলেন, প্রতিটি ট্রেন আসার পরেই ফাংশনাল টেস্ট, পারফরমেন্স টেস্টসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এই অংশে চলাচলের জন্য ১০ সেট ট্রেনের টেস্ট শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব ধরনের সিস্টেমের সমন্বয়ে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট শুরু হবে ১ সেপ্টেম্বর।
"এই টেস্ট দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে। আবার সর্বোচ্চ তিন মাসও সময় লাগতে পারে। এ অবস্থায় ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক ট্রেন পরিচালনায় কোনই সমস্যা হবে না," তিনি বলেন।
পিছিয়ে নেই জনবল নিয়োগ
ট্রেন পরিচালনা ও স্টেশন ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে সিদ্দিক বলেন, প্রথম অংশের জন্যে এই জনশক্তি যথেষ্ট।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি বিদেশেও তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। অনেকেই আবার প্রশিক্ষণ শেষে মেট্রো ট্রেনে ব্যবহারিক শিক্ষা নিচ্ছেন।
তিনি জানান, চলতি মাসে আরও ৩০ জন ট্রেন অপারেটর ও স্টেশন অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী বছর মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু হলে এই জনশক্তি কাজে লাগবে।
বিদ্যুত সংযোগে একাধিক বিকল্প
জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের বিপর্যয় না ঘটলে বিদ্যুতচালিত মেট্রো ট্রেন বিদ্যুত সঙ্কটে বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, জাতীয় গ্রিডের তিনটি লাইন থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিতরণ লাইন থেকে নেয়া হয়েছে আরও একটি লাইন। প্রতিটি লাইনই আবার ডাবল সংযোগ।
এসব লাইনের কোন একটিতে বিদ্যুত থাকলেই পুরো মেট্রো রেল পরিচালনায় কোন সমস্যা হবে না। তাছাড়া প্রতিটি স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় জেনারেটর এবং প্রতিটি জেনারেটরের ব্যাকআপ জেনারেটর রয়েছে বলেও তিনি জানান।
ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে মেট্রো রেল
ফজরের নামাজের পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মেট্রো রেল পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, প্রথম দিকে ১০ মিনিট পর পর ট্রেন পরিচালনা করা হবে। জনগণের অভ্যস্ততা বাড়লে, যাত্রী সংখ্যা বাড়লে ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো হবে। চাহিদার চূড়ান্ত পর্যায়ে সাড়ে তিন মিনিট পর পর ট্রেন পরিচালনা করা হবে বলেও জানান এমএএন সিদ্দিক।
এসেছে ১৭ সেট ট্রেন
এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের আওতায় উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রো রেল পরিচালনায় প্রয়োজন হবে ২০ সেট ট্রেন। চার সেট ব্যাকআপসহ প্রকল্পের আওতায় ২৪ সেট ট্রেন পরিচালনার কথা থাকলেও দেশের সীমানায় এসেছে ১৭ সেট।
অবশ্য প্রথম অংশের জন্য প্রয়োজনীয় ১০ সেট ট্রেন দেশে এসেছে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যেই।