২০২৭ সালের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তর
অর্থায়নের প্রাথমিক নিশ্চয়তা পাওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে আশা করছে ২০২৭ সালের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে পুরো মিটার গেজ রেললাইনকে ব্রড গেজে রূপান্তরের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
লাকসাম-চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী-আখাউড়া রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে আশ্বাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।
তবে রেলওয়ের মহাপরিকল্পনায় দেশের পূর্বাঞ্চলের ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনকে ডাবল গেজ এবং ডুয়েল গেজ (একই সঙ্গে মিটার গেজ এবং ব্রড গেজ) রূপান্তরের কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ায় তা নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা যায়নি।
পূর্বাঞ্চলে রেলের ব্রড গেজ লাইন স্থাপন হলে পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও খুলনার সঙ্গেও চট্টগ্রামের যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। পশ্চিমাঞ্চলে ব্রড গেজে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও পূর্বাঞ্চলে এখন অবধি মিটার গেজ রেল চলছে। ঢাকা পর্যন্ত ব্রড গেজ লাইন থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরো রুট মিটার গেজে রয়ে গেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে রেলের গতি বাড়বে এবং ৩০% বেশি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। বর্তমান রেল রুটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব কমবে প্রায় এক ঘণ্টা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার বলেন, রেলওয়ে তার মহাপরিকল্পনায়, সারা দেশে পর্যায়ক্রমে রেল নেটওয়ার্ক ব্রড গেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল রুট ডুয়েল গেজে রূপান্তরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েল গেজে রূপান্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
কয়েক বছর আগে পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বৈদেশিক ঋণ পাওয়া না যাওয়ায় টঙ্গী-আখাউড়া এবং লাকসাম-চট্টগ্রাম অংশের কাজ শুরু করা যায়নি। এডিবির সঙ্গে সময়মতো ঋণ চুক্তি এবং নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে আশা করা যাচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে পুরো ঢাকা-চট্টগ্রাম ডুয়েল গেজে রূপান্তর হবে।
সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশ লিডিং পাইপলাইন ২০২৩-২৫ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে লাকসাম-চট্টগ্রাম ডুয়েল গেজ প্রকল্পে ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে টঙ্গী-আখাউড়া ডুয়েল গেজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের সম্মতি জানিয়েছে। পরে এসব প্রকল্পে আরো ঋণ দেবে সংস্থাটি।
প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী টঙ্গী থেকে আখাউড়া রুটের ৯৩ কিলোমিটারের রেললাইনকে ডাবল লাইন ডুয়েল গেজে রূপান্তরে ব্যয় হবে ১৪,৫৮৭ কোটি টাকা। এর ৮৫% উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে লাকসাম-চট্টগ্রাম রেললাইনকে ব্রড গেজে রূপান্তরের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫,৬২০ কোটি টাকা। আগের প্রকল্পের মতো এ প্রকল্পেরও ৮৫% ব্যয় বিদেশ থেকে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রকল্পের আওতায় ব্রড গেজে রূপান্তর হবে ৭২ কিলোমিটার লাইন। গত জুলাই পর্যন্ত এ প্রকল্পের ৮৪.৫% কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলাম।
কক্সবাজারকে যুক্ত করতে নতুন কর্ড লাইন
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, শুধু চট্টগ্রামের সঙ্গে নয়, ব্রড গেজে ট্রেন চলাচল করতে পারবে কক্সবাজারে। এখন শুধু ব্রড গেজে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার রেল লাইনকে যুক্ত করতে পাহাড়তলী হয়ে দোহাজারী পর্যন্ত নতুন ব্রড গেজে কর্ড লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে।
এডিবির অর্থায়নে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ব্রড গেজে নতুন রেললাইন নির্মাণের প্রকল্প চলমান রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো পূর্বাঞ্চলে ব্রড গেজ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে ট্রান্সএশিয়ার রেলওয়ে কানেক্টিভিটি স্থাপনের বাধাও দূর হবে। ট্রান্সএশিয়ার রেলওয়ে কানেক্টিভিটির মাধ্যমে চীন, পাকিস্তান, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।