অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ: গ্রামীণ টেলিকম ইউনিয়নের আরও এক নেতা গ্রেপ্তার
শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত ও বিধিবহির্ভূতভাবে প্রায় ২৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের আরও এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গ্রেপ্তারকৃতের নাম মোঃ মাইনুল ইসলাম, তিনি গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি।
তাকে কুমিল্লা সদর থানার মগবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি গুলশান বিভাগ। এসময় তার হেফাজত হতে একটি ল্যাপটপ, দুইটি মোবাইল ফোন এবং ঢাকা ব্যাংকের ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে ডিবি।
রবিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী এবং টেলিকম ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান মিরপুর মডেল থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের একটি মামলা করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিবি-গুলশান বিভাগকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি পুলিশ দেখতে পায়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ক্রমাগত নবায়ন করে। শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫% অর্থ ৮০:১০:১০ অনুপাতে ওয়ার্কারর্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বরাবর প্রদান করার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির "কর্মচারীরা স্থায়ী নয়" এবং "কোম্পানি অলাভজনক" ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার কথা বলে শ্রমিকদের আইনানুগ লভ্যাংশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে। বিভিন্ন আইনানুগ দাবি-দাওয়ার কারণে গত ২৫/১০/২০২০ তারিখে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ একযোগে বেআইনিভাবে ৯৯ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করে।
তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও লভ্যাংশ পাওনা, বেআইনিভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরে কোম্পানিতে পুনর্বহাল না করা, কোর্টের আদেশ অনুযায়ী পুনর্বহালের পরেও দায়িত্ব না দিলে-কনটেমপ্ট অফ কোর্ট, কোম্পানির অবসায়ন দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে শ্রমিকরা এবং শ্রমিক ইউনিয়ন, গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শ্রম আদালত এবং হাইকোর্টে প্রায় ১৯০টি মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করেন। তড়িঘড়ি করে অনেকটা গোপনে এ সকল মামলা উত্তোলন, শ্রমিকদের অর্থ প্রদান এবং প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়।
তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকম এবং গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী গত ১০ মে ২০২২ থেকে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট একাউন্ট খোলা হয়। চুক্তি অনুযায়ী সেটেলমেন্ট একাউন্ট হতে শ্রমিকদের পাওনা এবং ৫% অগ্রিম কর ব্যতীত অন্য কোন অর্থ ছাড় করার সুযোগ না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং এর আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ মাইনুল ইসলামসহ ইউনিয়নের কতিপয় নেতার যোগসাজশে উক্ত একাউন্টের অনুমান ৪৩৭ কোটি টাকা হতে চেকের মাধ্যমে গত ১৭ মে এবং ২৫ মে তারিখে মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে নিয়ে আসা হয়।
৪৩৭ কোটি টাকার মধ্যে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হলে বাকি টাকা কোথায় গেল, প্রশ্ন করা হলে ডিবিপ্রধান বলেন, 'বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর দায় এড়াতে পারেন না। আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। তদন্তে যা আসবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।'