অত্যাধুনিক কারখানা স্থাপনে ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বার্জার পেইন্টস
অত্যাধুনিক কারখানা স্থাপনে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড।
বর্তমানে ঘর রঙ করার পেইন্টের বাজারের ৫০ শতাংশই রয়েছে বার্জারের দখলে। বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পনগরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ৪০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠানটি উচ্চমানের পেইন্ট উৎপাদন কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
শিল্পনগরীতে একটি 'পরিবেশ-বান্ধব' কারখানা স্থাপনের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হবে বলে আশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
'নির্মাণকাজ শেষ হতে প্রায় ১৮ মাস সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং শুধুমাত্র ফ্যাক্টরি স্থাপনেই ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হবে,' বলেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী।
'আমরা কারখানার নির্মাণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করব, যা হবে একটি স্বয়ংক্রিয় উত্পাদন ইউনিট।' তিনি আরও বলেন, এখানে আমরা একটি উন্নয়ন ও গবেষণা কেন্দ্রও স্থাপন করব।
২০১৮ সালে কোম্পানিটি চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত শিল্প নগরীতে ৩০ একর জমি ইজারা নেয় এবং ২০২০ সালে আরও ১০ একর জায়গা এর সঙ্গে যোগ করে।
বার্জার পেইন্টসয়ের নতুন কারখানায় ডেকোরেটিভ পেইন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট, মেরিন-কোটিং, উড কোটিং, কনস্ট্রাকশন এডেসিভস, কেমিক্যাল, অটোমেটিভ পেইন্ট উৎপাদিত হবে যার সবগুলোরই বাজারে উচ্চ চাহিদা রয়েছে যা দিন দিন আরও বাড়ছে৷
স্থানীয় পেইন্ট শিল্প আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে কারণ নতুনরা বাজার দখলে আগ্রাসীভাবে ডিস্ট্রিবিউশন বাড়াচ্ছে।
আর তাই শীর্ষ পেইন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনার কথা ভাবছে। একইসঙ্গে প্রিমিয়াম পণ্য আনছে যাতে থাকছে অত্যাধুনিক সব সুবিধা, হাই প্রোটেকটিভ কোটিং ও প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধান।
বার্জার পেইন্টস, এশিয়ান পেইন্টস, নিপ্পন পেইন্ট, জতুন পেইন্ট, এসিআই-এর সাথে আকজোনোবেল জয়েন্ট কোলাবোরেশন এবং আরএকে পেইন্টসের সঙ্গে কানসাই নেরোলাক পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড জয়েন্ট কোলাবোরেশন- এই ছয়টি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাজারের ৮২ শতাংশ দখল করে রেখেছে। স্থানীয় ৮টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসহ অন্যরা বাজারের অবশিষ্ট ১৮ শতাংশের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
বার্জার পেইন্টস ঢাকা এবং চট্টগ্রামে দুটি কারখানা নিয়ে মোট বাজারের অর্ধেকজুড়েই আধিপত্য বিস্তার করছে। এর পরেই আছে ভারতীয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান পেইন্টস লিমিটেড যা মোট বাজারের ১৬ শতাংশ দখল করে রেখেছে।
বাংলাদেশ পেইন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ)-র ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পেইন্টস বাজার বার্ষিক ১০- ১২ শতাংশ হারে প্রসারিত হচ্ছে। ওই বছর পেইন্টের বাজার ৩০০ কোটি ৩০ লাখ টাকায় পৌঁছে যা প্রায় ২ লাখ টন পেইন্টের সমমূল্য।
২০০৬ সালে শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত হয় বার্জার পেইন্টস। ২০২১-২২ অর্থবছরে তারা ৩১ দশমিক ৮০ শতাংশ রেভিনিউ গ্রোথ এবং ১৯ শতাংশ ভলিউম গ্রোথ অর্জন করে।
সে বছর বার্জার পেইন্টসের নিট মুনাফা দাঁড়ায় ২৯১ কোটি টাকা, শেয়ারহোল্ডারদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ৪০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করে।
গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নতুনত্ব আনতে প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু নতুন পণ্য সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে।
পেইন্ট শিল্পখাতের সবচেয়ে পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বার্জার পেইন্ট অন্যতম। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পেইন্ট নির্মাতাদের মধ্যে একটি বার্জার৷ ১৯৭৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের বাজারে তারা যুক্ত হয়।